Solo Trip: অমরনাথ সত্যিই ‘দুর্গম গিরি… দুস্তর পারাবার’, অতঃপর একাকী ‘যাত্রীরা হুঁশিয়ার’
Solo Trip Amarnath: একাকী অমরনাথ যাওয়া কোনও কঠিন ব্যাপার নয়। সাধারণত ১ জুলাই থেকে অমরনাথ যাত্রা শুরু হয়। চলবে ৩১ অগাস্ট পর্যন্ত তবে সোলো ট্রিপ-এর ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা মেনে চলা বাঞ্ছনীয়।
শুক্লা ভট্টাচার্য
‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে…’
হিন্দুদের অন্যতম তীর্থক্ষেত্র অমরনাথ। কাশ্মীরে (Kashmir) অবস্থিত অমরনাথ গুহা (Amarnath Cave) সম্পর্কে একাধিক গল্প কথিত রয়েছে। যেমন, অমরনাথ গুহাতেই শিব-পার্বতীর মিলন হয়েছিল। সকলের পক্ষে নাকি এই গুহায় প্রবেশ করা সম্ভব হয় না। আবার অধিকাংশের বিশ্বাস, অমরনাথ গুহায় প্রবেশ করে এক মনে কিছু চাইলে সেই মনস্কামনা পূরণ হবেই। এই বিশ্বাসে বছর-বছর লক্ষ-লক্ষ পুণ্যার্থী অমরনাথ গুহায় পাড়ি দেন। অমরনাথ যাত্রা কিছুটা কষ্টসাধ্য অবশ্যই। তবে গ্রুপে অর্থাৎ দল বেঁধে অমরনাথ যেতে হয়, একাকী যাওয়া যায় না—এরকম অনেক ধারণা প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু, এসব আদতে কোনও যুক্তিই নয়। ইচ্ছা মানুষের সবচেয়ে বড় শক্তি। আর এটা না থাকলে একা অমরনাথ কেন, কোথাওই যাওয়া সম্ভব নয়।
কীভাবে একা অর্থাৎ সহজ কথায় Solo Trip-এ অমরনাথ যাবেন?
অমরনাথ যাত্রা করার জন্য তিন মাস আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হয়। সাধারণত ১ জুলাই থেকে অমরনাথ যাত্রা শুরু হয় এবং চলে ৩১ অগাস্ট পর্যন্ত। যাত্রা শুরুর তিনমাস আগে Shri Amarnath Ji Shrine Board-এর ওয়েবসাইটে নাম নথিভুক্ত করতে হবে। কবে থেকে কীভাবে নাম নথিভুক্তকরণ হবে, সে ব্যাপারে Shri Amarnath Ji Shrine Board-এর তরফে তিন মাস আগেই স্পষ্ট নির্দেশিকা দেওয়া হয়। সেই নির্দেশিকা মেনে প্রথমে বাড়ির কাছাকাছি নির্দিষ্ট হাসপাতালে শারীরিক চেক-আপ করাতে হয়। হাসপাতালের তরফে ফিট সার্টিফিকেট পেলে সেটা নিয়ে নির্দিষ্ট ব্যাঙ্ক মারফৎ Shri Amarnath Ji Shrine Board-এ নাম নথিভুক্ত করতে হবে। নাম নথিভুক্তকরণের সময়ই অমরনাথ গুহায় প্রবেশের তারিখ সম্পর্কে জানা যাবে। যে তারিখটি পাওয়া যাবে, সেই দিন অনুযায়ী সেনা বেস ক্যাম্প থেকে যাত্রা শুরু করতে হবে। Shri Amarnath Ji Shrine Board-এর তরফে নির্ধারিত ব্যাঙ্ক থেকেই অমরনাথ যাওয়ার জন্য নাম নথিভুক্ত করতে হবে। তার জন্য খরচ পড়ে মাথাপিছু ১২০ টাকা। এর প্রমাণস্বরূপ ব্যাঙ্ক থেকে একটা রসিদ দেওয়া হয়।
সেনা বেস ক্যাম্প থেকে যাত্রাশুরু
পহেলগাঁওয়ের নুনগাঁওয়ে এবং বালতালে সেনা ক্যাম্প থেকে সাধারণত অমরনাথ গুহায় যাত্রা শুরু হয়। কোন ক্যাম্প থেকে অমরনাথের উদ্দেশে যাত্রা করবেন, তা রেজিস্ট্রেশনের সময়ই ঠিক করে নিতে হয়। গুহায় ঢোকার ব্যাপারে যে তারিখের পাস (Pass) থাকে, তার আগেই বেস ক্যাম্পে চলে আসতে হয়। সাধারণত, জম্মুতে মিলিটারি ক্যাম্পে চেকিং-পর্ব শেষ করার পর সেখান থেকেই বাসে করে বালতাল অথবা পহেলগাঁও ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়। রেজিস্ট্রেশন পাস-এ যে ক্যাম্পের উল্লেখ থাকে, সেই ক্যাম্পেই সরাসরি বাস পৌঁছে দেবে।
পহেলগাঁও থেকে অমরনাথ গুহায় যেতে সাধারণত ৩ দিন সময় লাগে। আর বালতাল থেকে একদিনেই গুহায় পৌঁছনো সম্ভব। তাই পহেলগাঁও থেকে যাঁরা যাবেন, তাঁদের দিন তিন-চারেক আগেই সেখানকার ক্যাম্পে পৌঁছে যেতে হবে। আর বালতাল থেকে যাঁরা যাবেন, তাঁদের একদিন আগে পৌঁছলেই হবে।
বেস ক্যাম্প থেকে সরাসরি হেঁটে অথবা ঘোড়ায় বা পালকি/ডুলিতে অমরনাথ যাওয়া যায়। Shri Amarnath Ji Shrine Board-এর তরফে প্রিপেইড ঘোড়া এবং পালকির ব্যবস্থা করা হয়েছে। বালতাল থেকে ঘোড়ায় অমরনাথ গুহা যাওয়া-আসার খরচ ৪,৪৬০ টাকা। আর পালকিতে যাওয়া-আসার খরচ ৫,৬০০ টাকা। বালতাল থেকে অমরনাথ গুহায় যাতায়াতের মোট সময় লাগে প্রায় ১৪ ঘণ্টা। অন্যদিকে, পহেলগাঁও থেকে ঘোড়া বা পালকিতে অমরনাথে যেতে অবশ্য কিছুটা বেশি খরচ পড়ে। একদিনে ফেরাও সম্ভব নয়।
বালতাল থেকে অমরনাথ গুহায় পৌঁছনোর পর অনেকেই পহেলগাঁও দিয়ে নামার পরিকল্পনা করেন। সেক্ষেত্রে পঞ্চতরণী, শেষনাগ এবং চন্দনওয়াড়িতে ক্যাম্পে বা লঙ্গরখানায় রাত্রিবাস করতে পারেন। অন্যদিকে, পহেলগাঁও থেকে অমরনাথ গুহায় যাওয়ার পথেও এই ক্যাম্পগুলিতে রাত্রিবাস করা যায়।
কী-কী সতর্কতা নেবেন?
একাকী অমরনাথ যাওয়া কোনও কঠিন ব্যাপার নয়। তবে কিছু সতর্কতা মেনে চলা বাঞ্ছনীয়। যেমন:— ১) সর্বদা পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে। ২) রেজিস্ট্রশনের সময় ব্যাঙ্ক থেকে যে রসিদ দেওয়া হয়, সেটা দেখিয়ে পাস সংগ্রহ করতে হবে। জম্মু স্টেশনেই তার জন্য কাউন্টার করা হয়েছে। এছাড়া জম্মু মিলিটারি বেস ক্যাম্প থেকেও পাস সংগ্রহ করা যায়। সেই পাস যাত্রাশুরুর সময় থেকে গলায় ঝুলিয়ে রাখতে হবে। ৩) ঘোড়ায় বা পালকিতে যাত্রা করলে Shri Amarnath Ji Shrine Board-এর তরফে প্রিপেইড টিকিট কেটে নেওয়া ভাল। তবে কেউ রাতের দিকে ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে টিকিট কাটতে যেতে বলবে যাবেন না। ভোর ৫টায় যাত্রা শুরু হয় এবং তার আগেই টিকিট কাটা সম্ভব। ৪) হেঁটে হোক বা ঘোড়া, পালকি—খালি পেটে অমরনাথ যাত্রা করবেন না। খালি পেটে উঁচুতে উঠলে মাথা ঘোরা, গা-বমি ভাব হতে পারে। আবার অতিরিক্ত খেয়ে যাত্রা শুরু করাও উচিত নয়। তবে কাজুবাদাম, খেজুর, কিশমিশের মতো ড্রাই ফ্রুটস এবং চকোলেট সঙ্গে রাখা উচিত। হালকা খিদে পেলে বা দুর্বলতা বোধ করলে সেগুলি খেলে তৎক্ষণাৎ এনার্জি আসে। ৫) উপরের দিকে ঠান্ডা রয়েছে ভেবে অতিরিক্ত গরম পোশাক পরবেন না। যতটা গরম পোশাক পরলে স্বচ্ছন্দ্য বোধ হবে, ততটাই পরবেন। আর পর্যাপ্ত জল পান করবেন। হাঁটতে-হাঁটতে বা ঘোড়ায় গেলেও প্রচণ্ড রোদে গরম হতে পারে। গরম বোধ হলে তৎক্ষণাৎ জ্যাকেট-সোয়েটার খুলে নেবেন। না-হলে ডিহাইড্রেশন বা সানস্ট্রোকের সম্ভাবনা থাকে। ৬) ঘোড়ায় চড়ে গেলে উপরে ওঠা বা নীচে নামার সময় সহিস বা ঘোড়াওয়ালা যেভাবে, যেদিকে ঝুঁকতে বলবেন, সেটা মেনে চলবেন। আর ঘোড়ার জিন শক্ত করে ধরে রাখবেন। তাহলে পড়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না। ৭) খুব খাড়াই অথবা চড়াই থাকলে ঘোড়া থেকে নেমে কিছুটা হেঁটে যেতে পারেন। তাহলে ঝুঁকি থাকবে না। ৮) হেঁটে যাওয়ার ক্ষেত্রে হাঁটু গার্ড, গোড়ালি গার্ড পরা উচিত। সঙ্গে একটি লাঠি রাখা বাঞ্ছনীয়। তাহলে খাড়াই রাস্তায় হাঁটতে সুবিধা হবে। ৯) মাথা ব্যথা, গা ব্যথা, সর্দি-জ্বর, পায়খানা-সহ প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং শুকনো খাবার সঙ্গে রাখা উচিত। ১০) যাত্রা শুরুর আগে বা মাঝে সেনা ক্যাম্পে অথবা নঙ্গরখানার তাঁবুতে থাকতে হয়। অনেক জায়গাতেই মোবাইল চার্জিংয়ের ব্যবস্থা নেই। তাই সঙ্গে পাওয়ার ব্যাঙ্ক এবং টর্চ রাখা উচিত।
অমরনাথ সত্যিই ‘দুর্গম গিরি…দুস্তর পারাবার’, তাই ‘যাত্রীরা হুঁশিয়ার’। তবে ইচ্ছা ও মনের জোর থাকলে একাকী অমরনাথ যাত্রা করাও সম্ভব। ১ জুলাই একাকী অমরনাথ গুহা দর্শন করলাম। ওই দিন শিবিরে যেতে-যেতে একলা পথে ভাবছিলাম আমি পারলে আপনি নন কেন? Solo Trip-এর আর এক অর্থ আত্মান্বেষণও। আর সেটার জন্য মাঝেমধ্যে একটু slow-ও যে করতে হয় নিজেকে…