Yuzvendra Chahal: যিনি গুগলি দেন, তিনিই কি গুগলি পেলেন?
Asia Cup, CWC 2023: এশিয়া কাপের টিমে জায়গা না পাওয়ায়, আশঙ্কা বা বলা ভালো কার্যত নিশ্চিত, তিন বছরে তিন নম্বর বিশ্বকাপ মিস করতে চলেছেন। যিনি প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের গুগলিতে পরাস্ত করেন, এখানে যেন তাঁকেই একের পর এক গুগলি সামলাতে হচ্ছে!
খুব কম ব্যাটারই থাকেন, যাঁরা এই ডেলিভারি ঠিকঠাক বুঝতে পারেন। রং আন, বা সহজ করে বললে গুগলি। রিস্ট স্পিনারের সেরা অস্ত্র। শেন ওয়ার্ন থেকে বর্তমান প্রজন্মের রশিদ খান। একই অ্যাকশন, অথচ পুরো পুরি উল্টো! ডান হাতি ব্যাটাররা আন্দাজ করেন, লেগ স্পিনারের স্টক ডেলিভারির মতো বল বাইরে যাবে। শেষ মুহূর্তে দেখা যায় বল ভেতরে আসছে। কেউ বা দ্রুত অ্যাডজাস্ট করে নিতে পারেন। কারও উইকেটে লাগে কিংবা লেগ বিফোর! গুগলি বুঝে ওঠা খুবই কঠিন কাজ। বিশ্বের তাবড় তাবড় ব্যাটাররাই এই ডেলিভারিতে বোকা বনে যান। বাকি রিস্ট স্পিনারদের মতো ভুললে চলবে না যুজবেন্দ্র চাহালের কথাও। তিনিও যে গুগলি দিতে ওস্তাদ! কিন্ত এখন যেন তাঁকেই গুগলি সামলাতে হচ্ছে। কেমন এমন মনে হচ্ছে? বিস্তারিত জেনে নিন TV9Bangla Sports-এর এই প্রতিবেদনে।
সাদা বলে ভারতীয় ক্রিকেটে একটা সময় সুপার হিট ছিল কুল-চা জুটি। ভারতীয় দলের একটা যেন অলিখিত নিয়ম ছিল। পেসাররা দুর্দান্ত শুরু করবেন। পাওয়ার প্লে-তে প্রতিপক্ষের এক দুটো উইকেট তুলে নেবেন। এরপর মাঝের ওভারে সামলানোর দায়িত্ব কুলদীপ যাদব এবং যুজবেন্দ্র চাহালের। ব্যাটিংয়ে যেমন জুটি গড়া হয় ঠিক তেমনই বোলিংয়েও। ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে যেন অলিখিত নিয়ম। একজন চেষ্টা করবেন উইকেট সামলে ইনিংস অ্যাঙ্কর করার। আর একজন রানের গতি ঠিক রাখার। যে যেটায় স্বচ্ছন্দ, নিজেদের মতো ভূমিকা ঠিক করে নেবেন। তেমনই বোলিংয়েও কুলদীপ ও চাহাল জুটি। একজন এক প্রান্ত থেকে রান আটকানোর চেষ্টা করতেন। তাতে ব্যাটারদের মধ্যে চাপ তৈরি হত। আর এক জন আক্রমণাত্মক বোলিং করে চাপে থাকা ব্যাটারকে শট খেলতে বাধ্য করতেন। ব্যাটার ভুল শট খেলে উইকেটও দিয়ে আসতেন। ভারতীয় দলে এখন এই দুই স্পিনারকে জুটিতে দেখা! ইংল্যান্ডের আবহাওয়ার মতো। কোনও ভরসা নেই।
এশিয়া কাপের দল ঘোষণা করেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। ১৭ সদস্যের স্কোয়াড। সঙ্গে একজন রিজার্ভ প্লেয়ার সঞ্জু স্যামসন। লোকেশ রাহুলকে একান্তই পাওয়া না গেলে এবং খুব প্রয়োজন হলে তবেই সঞ্জুকে মূল স্কোয়াডে যোগ করা হতে পারে। এশিয়া কাপের স্কোয়াডে সংখ্যাটা ১৭ হলেও বিশ্বকাপে গড়তে হবে ১৫ জনের স্কোয়াড। খুব স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসে, যুজবেন্দ্র চাহাল যিনি ১৭ জনেই জায়গা পাননি, আদৌই কি বিশ্বকাপের ১৫-তে আসতে পারবেন? পরিস্থিতিতে বিশাল কোনও পরিবর্তন না হলে এই সম্ভাবনা নেই। আপাতত ধরেই নেওয়া যায়, বিশ্বকাপে সুযোগ হচ্ছে না চাহালের। স্কোয়াডে একজন রিস্ট স্পিনার রয়েছেন, কুলদীপ যাদব।
চাহাল সুযোগ না পাওয়ায় অনেক প্রাক্তন ক্রিকেটার প্রশ্ন তুললেও উত্তরটা যেন নিজেরাই দিচ্ছেন। সত্যিই তো, কাকে বাদ দেওয়া হবে! এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপ, মাঝে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের ওয়ান ডে সিরিজ। পেস আক্রমণের সঙ্গে কোনও আপোস করা যাবে না। চাহাল এমন পরিস্থিতিতে এই প্রথম নন। ২০২০ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কোভিডের কারণে পিছিয়ে যায়। ২০২১ সালে বিশ্বকাপ আয়োজন করে ভারত। যদিও টুর্নামেন্টটি হয় আরব আমির শাহিতে। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে অবধি নিশ্চিত ছিল, ভারতীয় বোলিং লাইন আপের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হতে চলেছেন যুজবেন্দ্র চাহাল। তার আগের আইপিএলে চোখ ধাঁধানো পারফরম্যান্স করেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের রহস্য স্পিনার বরুণ চক্রবর্তী। হঠাৎই বিশ্বকাপের স্কোয়াডেও জায়গা পান বরুণ। অভিজ্ঞ যুজবেন্দ্র চাহালের বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন ভেঙে যায়। ভারত প্রথম রাউন্ডেই বিদায় নিয়েছিল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসে এটিই ভারতীয় দলের সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্স।
গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ায়। টিমে ছিলেন যুজবেন্দ্র চাহাল। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে চুটিয়ে অনুশীলন করেছেন। প্রথম ম্যাচে সুযোগ পাননি। একটা করে ম্যাচ এগিয়েছে, মনে হয়েছে চাহালকে খেলানো হবে। কেন না, অস্ট্রেলিয়ায় লেগ স্পিনাররা সাফল্য পেয়ে থাকেন। অস্ট্রেলিয়ার ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগ বিগ ব্যাশে প্রতিটা দলই লেগ স্পিনার খেলায়। বিশ্বকাপেও প্রায় প্রতিটি দলই লেগ স্পিনার খেলিয়েছে। গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে নকআউট। নম্বর আসেনি চাহালের। সেমিফাইনালের আগে অবধিও আশায় ছিলেন চাহাল। সেখানেও সুযোগ হয়নি। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে বিদায় নেয় ভারত। চাহালের আর বিশ্বকাপ খেলা হয়নি।
সামনে ভারতের মাটিতে ওয়ান ডে বিশ্বকাপ। গত এক-দু বছরে যুজবেন্দ্র চাহাল যেটুকু সুযোগ পেয়েছেন, তাঁকে চূড়ান্ত সফল বলা না গেলেও অন্তত ব্যর্থ বলা যায় না। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও নজর কেড়েছেন। কিন্তু এশিয়া কাপের টিমে জায়গা না পাওয়ায়, আশঙ্কা বা বলা ভালো কার্যত নিশ্চিত, তিন বছরে তিন নম্বর বিশ্বকাপ মিস করতে চলেছেন। যিনি প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের গুগলিতে পরাস্ত করেন, এখানে যেন তাঁকেই একের পর এক গুগলি সামলাতে হচ্ছে!