Lionel Messi : পেলের মতোই মার্কিন মুলুক যাত্রা, মেসির মায়ামি বাছার পিছনে কি সেই রোনাল্ডো-তত্ত্বই?

লাতিন আমেরিকার মতো উত্তর আমেরিকাবাসী ফুটবল নিয়ে বাঁচে না। মেজর লিগ সকারে লিওনেল মেসির প্রবেশের পর এই আক্ষেপের জায়গাটা কি পূরণ হবে?

Lionel Messi : পেলের মতোই মার্কিন মুলুক যাত্রা, মেসির মায়ামি বাছার পিছনে কি সেই রোনাল্ডো-তত্ত্বই?
গ্রাফিক্স: টিভি৯ বাংলা
Follow Us:
| Updated on: Jun 08, 2023 | 7:34 PM

‘আমাদের যুক্তরাষ্ট্রে সুপারস্টারের অভাব নেই। কিন্তু তাঁরা কেউই পেলে নন।’ কথাগুলো নিউইয়র্ক কসমস ক্লাবের মুখপাত্র জন ও’রেইলির। ১৯৭৫ সালে উত্তর আমেরিকান সকার লিগের ক্লাব নিউইয়র্ক কসমস যোগ দেন ফুটবল কিংবদন্তি পেলে। সে দিন সাংবাদিক সম্মেলনে প্রবল হইচইয়ের মাঝে এই দুটো কথা বলতে পেরেছিলেন জন। প্রায় ৫০ বছর আগে ২.৮ মিলিয়ন ডলার অর্থের বিনিময়ে ব্রাজিলের বাইরে পা রেখেছিলেন পেলে। জনপ্রিয় নয় এমন ফুটবল লিগের পেলের মতো কিংবদন্তির কি অর্থের কারণে গিয়েছিলেন? তা মোটেও নয়। বরং, বলা যেতে পারে মার্কিনমুলুকে ফুটবলে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করার জন্যই সেরা শিল্পীকে নিয়ে গিয়েছিল আমেরিকা। কসমসের হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে প্রীতি ম্য়াচ খেলে বেরিয়েছেন পেলে। খেলে গিয়েছিলেন কলকাতাতেও। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খেলাধুলোর প্রসারে ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তির ভূমিকা আজও মনে থেকে গিয়েছে। ১৯৭৫ থেকে ২০২৩। এই ৪৮ বছরে আমেরিকায় জনপ্রিয়তা ও প্রতিষ্ঠা দুই-ই পেয়েছে ফুটবল। পেলের আগমনের প্রায় পাঁচ দশক পর যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাচ্ছেন লিওনেল মেসি।

পেলের পা পড়ার আগে ফুটবল নিয়ে সে দেশে একেবারেই মাতামাতি ছিল না। বাস্কেটবল, রাগবি, বেসবল এ সবই ছিল জনপ্রিয়। ছবিটা বদলে গিয়েছিল পেলের যাওয়ার পর। তিনি উত্তর আমেরিকায় যাওয়ার পথ খুলে দিয়েছিলেন অন্যদের জন্য। পেলেকে অনুসরণ করে আমেরিকায় পাড়ি জমান জর্জিও চিনাগিলা, ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার, স্যান্টোসের সতীর্থ কার্লোস আলবার্তো। পরে একে একে জোহান ক্রুয়েফ, ইউসেবিও, ববি মুর, জর্জ বেস্ট, গর্ডন ব্যাঙ্কসরাও এনএএসএলে খেলেছেন। তারকাদের হাত ধরেই ধীরে ধীরে পাল্টে গিয়েছে ছবি। আমেরিকায় ফুটবল বেশ জনপ্রিয় এখন। তবে লাতিন আমেরিকা বা ইউরোপের মতো শিরা-উপশিরায় ঢুকে পড়তে পারেনি। লাতিন আমেরিকার মতো উত্তর আমেরিকাবাসী ফুটবল নিয়ে বাঁচে না। মেজর লিগ সকারে লিওনেল মেসির প্রবেশের পর এই আক্ষেপের জায়গাটা কি পূরণ হবে? ইউরোপ ছেড়ে লিওনেল মেসির পরবর্তী গন্তব্য আমেরিকা। খোদ মেসি এ খবর নিশ্চিত করেছেন। ডেভিড বেকহ্যামের ক্লাব ইন্টার মায়ামি তাঁর আগামী গন্তব্য।

আল হিলালের হাজার হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব পায়ে ঠেলেছেন বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলার। অতীত অভিজ্ঞতার জেরে প্রিয় ক্লাব বার্সেলোনাতেও গেলেন না মেসি। অনেকে মতে, আল হিলালের প্রস্তাব ফিরিয়ে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে পরোক্ষে ঠুকেছেন তিনি। দুই ফুটবল সুপারস্টারের প্রতিদ্বন্দ্বিতা সর্বজনবিদিত। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সৌদির ক্লাব আল নাসেরে রেকর্ড অর্থে যোগ দেন সিআর সেভেন। বয়সের কারণে ইউরোপের ক্লাবগুলোয় গ্রহণযোগ্যতা কমে আসা, আকাশছোঁয়া প্রস্তাব উপেক্ষা করতে পারেননি রোনাল্ডো। এই জায়গাতেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকে টেক্কা দিয়ে গেলেন লিও। এও বাস্তব, রোনাল্ডোর মতোই ইউরোপের ক্লাবগুলিতে মেসির গ্রহণযোগ্যতাও কমেছে। যদিও সৌদি প্রো লিগে আল নাসেরের প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব আল হিলাল মেসিকে পেতে টাকার থলি উপুড় করে দিলেও ও দিকে গেলেন না আর্জেন্টাইন তারকা। স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন, ‘অর্থ আমার জন্য কখনও সমস্যা বা বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। টাকার জন্য হলে সৌদি আরবে যেতাম।’

মেসির আমেরিকায় পাড়ি হঠাৎ করে, তা বলা যাবে না। বেশ আটঘাঁট বেঁধেই এমএলএস বেছে নিয়েছেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টার। মেসিকে নিয়ে আল হিলাল বা বার্সেলোনার লং টার্মের পরিকল্পনা ছিল না। সে দিক থেকে এমএলএস মেসি ও তাঁর পরিবারের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করতে পারে। ইন্টার মায়ামিতে কী কী পাচ্ছেন মেসি? বার্ষিক ৫০ হাজার মিলিয়ন ডলার আর্থিক প্য়াকেজ ছাড়াও মায়ামির সঙ্গে দুটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড অ্যাপল ও অ্যাডিডাসের চুক্তির প্রফিট শেয়ার, এমএলএসের টেলিভিশন সম্প্রচার স্বত্বের একটা অংশের পাশাপাশি অবসরের পর ক্লাবের লভ্যাংশের একটা অংশ পেতে পারেন। এতো গেল আর্থিক সুরক্ষার কথা। কেরিয়ারের দিক থেকে দেখা গেলে অবসরের গ্রহে যাওয়ার আগে মেসির ঠিকানা হতে চলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৬ সালে পরবর্তী ফুটবল বিশ্বকাপ হবে আমেরিকায়। মেসির যা ফিটনেস তাতে আরও তিনটে বছর অনায়াসে খেলতে পারেন। হয়তো পরবর্তী বিশ্বকাপেও খেলবেন। তাই আমেরিকা বেস্ট অপশন।

আর এখানেও এসে যাচ্ছে সেই রোনাল্ডো তত্ত্ব। বিশ্বকাপ আয়োজনের স্বপ্ন নিয়েই তো সৌদি সাদরে নিয়ে গিয়েছে রোনাল্ডোকে। ২০২৬ সালের বিশ্বকাপের আগে মার্কিনি মুলুকে ফুটবল জোয়ার তুলতে, জনতাকে মাঠমুখী করে তুলতে মেসি ছাড়া আর কে পারেন?