Asian Champions Trophy 2023 Final: ১-৩ থেকে ৪-৩ জয়, দুরন্ত আকাশে এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ভারতের!

India vs Malaysia: হারিয়ে যেতে যেতে হঠাৎই জ্বলে উঠল টিম। হারিয়ে যেতে যেতে হঠাৎই ম্যাচে ফিরল টিম। যাঁরা চাপ সামলাতে পারেন, স্বপ্নও পূরণ করতে পারেন। হার্দিক-হরমনপ্রীত-আকাশদীপরা এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতে তা-ই প্রমাণ করলেন।

Asian Champions Trophy 2023 Final: ১-৩ থেকে ৪-৩ জয়, দুরন্ত আকাশে এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ভারতের!
১-৩ থেকে ৪-৩ জয়, দুরন্ত আকাশে এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ভারতের!Image Credit source: Hockey India Twitter
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 12, 2023 | 10:32 PM

সেকেন্ড কিংবা সেকেন্ডের ভগাংশে বদলে যেতে পারে স্কোরলাইন। পিছিয়ে থাকা টিম প্রবল ভাবে ফিরে আসতে পারে ম্যাচে। এই মুহূর্তগুলো রোমাঞ্চকর। উত্তেজনার চরম শিখরে বসে পরতে পরতে ম্যাচ বদল দেখার সুযোগ মেলে। ০-১ থেকে ৩-১ যেমন স্বপ্নের সওদাগর হওয়ার গল্প শোনায়, ১-৩ থেকে ৩-৩ও। গাঢ় নীল টার্ফে বলের চকিৎ পালা বদল দেখতে দেখতে গ্যালারি শিউরে উঠতে পারে। চমকে উঠতে পারে। আশা হারাতে হারাতে জেগে উঠতে পারে আবার। চেন্নাইয়ের মাঠে সেই কাহিনিই যেন আরও একবার শোনাল হকি। মালয়েশিয়ার বিরুদ্ধে এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ওঠা-পড়া কম থাকল না। ২০১৮ সালে শেষবার চ্যাম্পিয়ন ভারত। এ বার ধরে মোট চারবার। চরম উত্তেজক ম্যাচে ভারত জিতল কী ভাবে, তুলে ধরল TV9Bangla Sports

১৯৮০ সালে মস্কো অলিম্পিকে শেষবার সোনা জিতেছিল ভারত। ৪০ বছর পর টোকিও অলিম্পিক থেকে আবার এসেছে পদক। বলা উচিত, বিশ্ব দরবারে মাথা তুলে দাঁড়াতে চল্লিশ বছর সময় লেগেছে ভারতীয় হকির। সামনের মাসে হানঝাউয়ে এশিয়ান গেমস। আগামী বছর প্যারিসে অলিম্পিক। হরমনপ্রীত সিংয়ের ভারতীয় টিম এই দুই মেগা শো-কর আগে রসদ জোগাড় করতে চেয়েছিল। এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি তাই হরমনপ্রীত-জার্মানপ্রীতদের কাছে প্রস্তুতি টুর্নামেন্ট। কিন্তু এই নতুন ভারতের মধ্যে যে স্বপ্ন দেখানোর মশলা আছে, তা দেখিয়ে দিল ক্রেগ ফুলটনের টিম।

দাপিয়ে ফাইনালে উঠেছে ভারত। উল্টো দিকে মালয়েশিয়া। যারা এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কখনও ফাইনালে ওঠেনি। সাফল্য বলতে পাঁচবার ব্রোঞ্জ জয়। যাদের বিরুদ্ধে গ্রুপ লিগের ম্যাচে ৫-০ জিতেছিল ভারত। সেই তাদের বিরুদ্ধেই ফাইনালে ভারত ১-৩ থেকে ৩-৩ করে ৪-৩এ জেতা কম কৃতিত্বের নয়। তবে যতটা দাপট ফাইনালে ভারত দেখাবে মনে হয়েছিল, তা দেখা গেল না। খুচরো ভুল, খানিকটা আত্মতুষ্টি আর সুযোগ নষ্টের খেসারত দেওয়ার জন্য। এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে তবু প্রাপ্তি, চাপের মাথায় ভারতের মাথা ঠান্ডা রাখতে শেখা। বিপক্ষের বক্সে ক্রমাগত হামলা করে যাওয়া।

শুরুটা অবশ্য চ্যাম্পিয়নের মতোই করেছিল ভারত। ৯ মিনিটে ১-০ এগিয়ে যায় হরমনপ্রীতের টিম। ক্রমাগত আক্রমণ, দুটো উইং ব্যবহার করা, বল সাপ্লাই, বিপক্ষের ডি-বক্সে ঢুকে পড়া— ভারত এই টুর্নামেন্টে আগ্রাসী হকির ছাপই রেখেছে। ফাইনালের প্রথম কোয়ার্টারও তার ব্যতিক্রম হল না। জার্মানপ্রীত সিং এই টিমটার চালক। বল বাড়ানোর লোক। ৯ মিনিটে তাঁরই ছোঁয়াতে পেনাল্টি কর্নার পেয়ে যায় ভারত। ক্যাপ্টেন হরমনপ্রীত সিং তখন মাঠের বাইরে। তাঁর বদলে ড্র্যাগ ফ্লিকারের ভূমিকায় ছিলেন যুগরাজ সিং। তিনিই ১-০ এগিয়ে দিলেন টিমকে। কিন্তু বিরতির ঠিক আগের মিনিটে অমিত রোহিদাসের একটা ভুল থেকে সমতা ফেরাল মালয়েশিয়া। ডি-বক্সের বাঁদিকে বিপক্ষের এক ফরোয়ার্ডকে আটকাতে গিয়ে ধাক্কা খান তিনি। বল চলে যায় অমিতের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। মালয়েশিয়া তখনও ভাবেনি গোল আসবে। পেনাল্টি কর্নার তোলার চেষ্টাই করেছিল। কিন্তু অমিতের ওই ভুলটার পরই ভারতীয় ডিফেন্সের মুহূর্তের জন্য থমকে যায়। তা থেকেই আজরাই আবু কামাল গোল এনে দেল মালয়েশিয়াকে। ১-১ এর মিনিট খানেক পরেই হার্দিক সিং আবার পেনাল্টি কর্নার এনে দিলেন ভারতকে। কিন্তু কাজে লাগাতে পারেননি মনদীপ, বিবেকরা।

খেতাব না জিতলেও মালয়েশিয়া যথেষ্ট অভিজ্ঞ টিম। মারহান জলিল পরের দুটো কোয়ার্টারে সেটাই বুঝিয়ে দিলেন হরমনপ্রীতদের। ফাইনালে মালয়েশিয়ান টিম দেখাল, আত্মবিশ্বাস আর ফোকাসের মিশেল থাকলে যে কোনও আগ্রাসী টিমকে চাপে ফেলে দেওয়া যায়। ১৮ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি কর্নার থেকে ২-১ করে গেলেন ৩০০র বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা রহিম রাজি। অমিত রোহিদাসের স্টিকে লেগে বল ঢুকে যায় গোলে। কিপার কৃষণ পাঠকের কিছুই করার ছিল না। একের পর এক ভুল, ভঙ্গুর ডিফেন্স, বল পজেশন রাখতে না পারা, বিপক্ষকে বক্সের আগে থামাতে না পারার খেসারত দিতে হল ভারতকে। ০-১ পিছিয়ে থেকে মালয়েশিয়ার ৩-১ এগিয়ে যাওয়ার কারণ এ সবই। দ্বিতীয় কোয়ার্টারেই ছটফটে ১১ মালয়েশিয়ান চেন্নাইয়ে ভারতের স্বপ্ন প্রায় শেষ করে দিচ্ছিল। পেনাল্টি কর্নার থেকে গোল করে মহম্মদ আমিনুদ্দিন এশিয়ান সেরার স্বপ্ন দেখাতে শুরু করে দিয়েছিল।

কে জানত, থ্রিলারের এখনও অনেক বাকি। তৃতীয় কোয়ার্টারের শেষ দেড়টা মিনিট মোড় ঘুরিয়ে দেবে ম্যাচের। ১-৩ থেকে দেড় মিনিটের মধ্যে ৩-৩ ভারতের। হরমনপ্রীত গোল করলেন পেনাল্টি থেকে। গুর্জন্ত এনে দিলেন ফিল্ড গোল। ভারতীয় টিমের মনোবল তখন তুঙ্গে। ফিরে এসেছে সেই আত্মবিশ্বাস, আগ্রাসন। এই টুর্নামেন্টে যখনই দরকার পড়েছে মাঠে নেমে অবিশ্বাস্য গোল করেছেন। ফাইনালেও জয়সূচক গোল আকাশদীপ সিংয়েরই। ৫৫ মিনিটে মালয়েশিয়ার ডি বক্সে টার্ন নিয়ে যে শটটা নিলেন আকাশ, অনেক দিন মনে রাখবে ভারতীয় হকি। আর মনে রাখবে ৭ গোলের রোমহর্ষক এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি।

ভারত-০ : মালয়েশিয়া-০

(যুগরাজ ৯, হরমনপ্রীত ৪৫, গুর্জন্ত ৪৫, আকাশদীপ ৫৫) (কামাল ১৪, রহিম ১৮, আমিনুদ্দিন ২৮ )