James Webb Telescope: এই নেকলেস মহাকাশের তারকাখচিত! আপনি তো কোন ছার, আদানি-আম্বানির পক্ষেও কেনা সম্ভব নয়

NASA Space Research: মহাকাশের বুকে যেন একখণ্ড 'নেকলেস'। মণিমুক্তো খচিত সেই হারে শোভা পেয়েছে রাশি রাশি গ্যালাক্সি। আপনার কাছে যত অর্থই থাকুক না কেন, এই মহাজাগতিক নেকলেস কেনার সামর্থ্য নেই কোনও আদানি-আম্বানিরও!

James Webb Telescope: এই নেকলেস মহাকাশের তারকাখচিত! আপনি তো কোন ছার, আদানি-আম্বানির পক্ষেও কেনা সম্ভব নয়
Follow Us:
| Updated on: Jul 02, 2023 | 12:47 PM

‘ভেবে দেখেছ কি?/তারারাও যত আলোকবর্ষ দূরে…’ এই ভাবনা থেকেই শুরু খোঁজ। হাজার হাজার আলোকবর্ষ দূরে থাকা জগৎসংসারে ছড়িয়ে থাকা ব্রহ্মাণ্ডদের খুঁজে চলেছে তুলনায় নেহাতই ক্ষুদ্র মানুষ। আর এই খোঁজে মানুষের সঙ্গী এখন জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ (James Webb Space Telescope)। প্রতিদিন প্রায় হাজারখানেক ছবি তুলে বিজ্ঞানীদের হাতে তুলে দিচ্ছে এই মহার্ঘ দূরবীক্ষণ। ফলত, মহাকাশের অজানা তথ্য বিশ্লেষণ করা যাচ্ছে অনায়াসে, উঠে আসছে অদ্ভুত সব তথ্য!

আকাশের গলায় অমূল্য নেকলেস

সম্প্রতি ওয়েব টেলিস্কোপে ধরা পড়েছে এমন এক ছবি, যা দেখে চক্ষু চড়কগাছ বিজ্ঞানীদের। মহাকাশের বুকে যেন একখণ্ড ‘নেকলেস’। মণিমুক্তো খচিত সেই হারে শোভা পেয়েছে রাশি রাশি গ্যালাক্সি। আন্তর্জাতিক জার্নাল অনুযায়ী, 2022 সালের অগস্টে মহাজাগতিক আলোর বেশ কিছু তরঙ্গ প্রতিফলিত হয় টেলিস্কোপের চোখে। মহাবিশ্বের বয়স যখন আজকের বয়সের 16 ভাগের একভাগ মাত্র, এই আলোকরশ্মিগুলো সেই সময়েরই। ‘ফার্নেস’ বা ‘ফরম্যাক্স’ নামক এক নক্ষত্রপুঞ্জের দিকে লক্ষ্য করার সময় একটি গামা রে (Gama Ray Burst) নজরে আসে জেমস টেলিস্কোপের। আলোকরশ্মিগুলো বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন, এই আলো আদতে মহাকাশের প্রাচীনতম গ্যালাক্সি থেকে এসেছে। এই গ্যালাক্সিগুলো একসঙ্গে থেকে তৈরি করে ‘মহাজাগতিক জালিকা’ (Cosmic Web)।

কসমিক ওয়েব কী?

কসমিক ওয়েবের গঠন সম্পর্কে আরও গবেষণার জন্য NASA ও জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের কর্মকর্তারা আলোচনায় বসেন। অবশেষে ASPIRE নামক এক সার্ভের মাধ্যমে আরও তথ্য এককাট্টা করার পরে তাঁদের আগ্রহ বাড়তে থাকে এবং আরও গবেষণা করতে একমত হয় দু’পক্ষ। সম্প্রতি জেমস ওয়েবের বিজ্ঞানীরা মহাকাশের আরও একটি ছবি প্রকাশ্যে আনে। টেলিস্কোপের নিয়ার ইনফ্রারেড ক্যামেরায় (Near-Infrared Camera অথবা NIRCam) তোলা এই ছবিতে ধরা পড়ে 8টি বৃহদাকার বৃত্ত, এগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রায় 10টি গ্যালাক্সি। বিগ ব্যাং (Big Bang) ঘটার প্রায় 83 কোটি বছর পর পর্যন্ত বেঁচে ছিল এই গ্যালাক্সিগুলো, তারপর ধ্বংসের মুখে এগোয় ছায়াপথগুলি।

NASA: James Webb Telescope shows numerous galaxies in an ancient Cosmic Web.

এত বৃহৎ ‘স্ট্রাকচার’ এক জায়গায় আটকে কীভাবে?

প্রায় 30 লক্ষ আলোকবর্ষ দীর্ঘ এই গ্যালাক্সির জালিকায় যথেষ্ট পরিমাণে ‘ভয়েড’ (Void) অর্থাৎ মহাজাগতিক শূন্যস্থান রয়েছে। তবে, শুধু নক্ষত্র বা গ্রহই নয়, এই জালিকায় অবস্থান করছে একটি বৃহদাকার ব্ল্যাকহোলও (Supermassive Black Hole)। মহাজাগতিক ধূলিকণা, গ্রহাণুপুঞ্জ বা অন্যান্য নক্ষত্রদের গিলে খাওয়ার জেরে ‘গামা রে বার্স্ট’ (Gama Ray Burst) হয় বিপুল পরিমাণে, আর তাই এই ব্ল্যাকহোলটিই জালিকার সবচেয়ে উজ্জ্বলতম স্থান। মহাকাশের যে কোনও উপাদানকেই আকর্ষণ করে অন্যান্য বৃহৎ উপাদান, এক্ষেত্রে এই জালিকা যথেষ্ট দীর্ঘ হলেও তাকে আকর্ষণ করার ক্ষমতা রাখে অন্যান্য বৃহদাকার ‘কোয়াজার’ (Quasar)। আর এই কসমিক ওয়েবকে একদিকে আটকে রেখেছে সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের তীব্র চৌম্বকীয় ক্ষেত্র।

NASA: James Webb Telescope shows numerous galaxies in an ancient Cosmic Web.

গ্যালাক্সিরাও ‘সমাজবদ্ধ’?

জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের বিশেষজ্ঞরা সাফ জানাচ্ছেন, মহাকাশে সাধারণত গ্যালাক্সিরা একা বাঁচে না, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা সঙ্ঘবদ্ধ অবস্থায় একটি ক্লাস্টার তৈরি করে। এই জালিকাও সেই মতামতের জলজ্যান্ত উদাহরণ। ‘অবজার্ভেবল ইউনিভার্স’-এ (Observable Universe) এমন কসমিক ওয়েবের সংখ্যা যে খুব একটা কম নয়, তা জানাচ্ছেন মহাকাশবিজ্ঞানীরাই। এই নয়া প্রাপ্তিতে মহাজাগতিক ‘নেকলেস’ সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের ধারণা আরও স্পষ্ট হবে, নাসার মহাকাশ গবেষকদের মতামত এমনটাই।

NASA: James Webb Telescope shows numerous galaxies in an ancient Cosmic Web.

দৈর্ঘ্যে লম্বা হলেও অদ্ভুত রকমের পাতলা এই ওয়েব

এখনও পর্যন্ত মহাকাশে প্রাপ্ত সর্ববৃহৎ কসমিক ওয়েবের নাম ‘হারকিউলিস-করোনা বোরিয়ালিস ওয়াল’ (Hercules–Corona Borealis Great Wall)। তবে, এই নতুন নেকলেসটিও যে খুব একটা ছোট এমনটা নয়, তবে এর প্রস্থ দেখে অবাক বিজ্ঞানীরা। ‘অন্যান্য কসমিক ওয়েবের থেকে বেশ অনেকটাই পাতলা এই নতুন ক্লাস্টার, আর তাতেই বেশ অবাক হচ্ছি’, বলছেন মহাকাশবিজ্ঞানী জিয়াওই ফান (Xiaohui Fan)। এখন বুঝতেই পারছেন, আপনার কাছে যত অর্থই থাকুক না কেন, এই মহাজাগতিক নেকলেস কেনার সামর্থ্য নেই কোনও আদানি-আম্বানিরও!