House of Recycled Diapers: ডাঁই হওয়া ডাইপারে তৈরি হল বাড়ি, সুবিধার কথা জানলে আপনিও একটা বানাতে চাইবেন

Recycled Diapers: তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে নাগরিকরা মাথার উপর একটি ছাদ জোটাতে হিমশিম খান ― ডাইপার এই সমস্যার সমাধান করতে পারে অনায়াসে, এমনই দাবি বিশেষজ্ঞদের। ডাইপার ডাঁই হয়ে জমে থাকে, বাড়ে দূষণ। এই সমস্যাও ঠেকাবে বাড়ি নির্মাণের এই নতুন কৌশল...

House of Recycled Diapers: ডাঁই হওয়া ডাইপারে তৈরি হল বাড়ি, সুবিধার কথা জানলে আপনিও একটা বানাতে চাইবেন
Follow Us:
| Updated on: Jun 19, 2023 | 12:57 PM

ইট-কংক্রিটে ঘেরা আমাদের ব্যস্ত শহর। বহুতল আর স্কাইস্ক্র্যাপারের ভিড়ে আদর-যত্নে লালিত হচ্ছে দূষণ, বেড়ে উঠছে বিশ্ব উষ্ণায়নের মতো সমস্যা। এখন এই ঘোরতর সমস্যা থেকে আমাদের সুরাহা দিতে পারে ডাইপার (Diaper)। হ্যাঁ, ব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত ডাইপার। কংক্রিটের সঙ্গে মিশে এই ডাইপার তৈরি করছে এমন এক উপাদান, যা বদলে দিতে পারে আমার, আপনার চেনা ‘অসুস্থ’ পৃথিবীকে!

ডাইপার জোটাবে মাথার উপর ছাদ!

সম্প্রতি ‘সায়েন্টিফিক রিপোর্টস’ নামক এক জার্নালে উঠে আসা তথ্যে চক্ষু চড়কগাছ নির্মাণ বিশারদদের। প্রায় 36 বর্গফুট আকারের একটি একতলা বাড়ি তৈরি করতে নাকি প্রয়োজন প্রায় 666 Kg ডাইপার! আর্থিক কাঠামোর জেরে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে নাগরিকরা মাথার উপর একটি ছাদ জোটাতে হিমশিম খান ― ডাইপার এই সমস্যার সমাধান করতে পারে অনায়াসে, এমনই দাবি বিশেষজ্ঞদের।

জনসংখ্যা বিস্ফোরণ ও ডাইপার ― সমস্যা কমবে?

বর্তমানে জনসংখ্যার নিরিখে ভারত পয়লা স্থানে, একই পথে এগিয়ে চলেছে ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তানের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোও। এমতাবস্থায় জন বিস্ফোরণ ঠেকানো না গেলেও সহজে ও ন্যূনতম খরচে পাকাবাড়ির ব্যবস্থা করতে অপরিহার্য হয়ে উঠতে পারে ডাইপার, বলছেন জাপানের কিতাক্যুশু বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ইঞ্জিনিয়ার সিশান্তি জুড়াইদা। ডাস্টবিন বা যত্রতত্র ব্যবহৃত ডাইপার ডাঁই হয়ে জমে থাকে, বাড়তে থাকে জল-মাটিদূষণ। এই সমস্যাও ঠেকাবে বাড়ি নির্মাণের এই নতুন কৌশল, মত জুড়াইদার।

Bizarre: This house was built from recycled diapers, do you want one?

ডাইপারেই ‘শক্তি’!

বাড়ির আয়ু বাড়াতে হলে বা বাড়িকে ভূমিকম্প প্রতিরোধী করতে গেলেই বাড়ি তৈরির খরচ বেড়ে যায়। আর এই প্রসঙ্গে গবেষণার সময়ে নানাবিধ আবর্জনাকে সম্ভাব্য বাড়ি তৈরির উপাদান হিসেবে খতিয়ে দেখতে শুরু করেন গবেষকরা। তালিকায় ছিল কয়লা, গুঁড়ো ছাই থেকে প্লাস্টিক ― সবকিছুই। শেষ পর্যন্ত ডাইপারকেই বেছে নেন বিজ্ঞানীরা কারণ, এর মধ্যে থাকা প্লাস্টিক, কাঠের অংশ, সুতি ও রেয়ন একটি বাড়ির কাঠামোকে এতটাই মজবুত করতে পারে, যা আমআদমির ধারণার বাইরে!

কতটা ভার বহনে সক্ষম ফেলে দেওয়া ডাইপার?

জুড়াইদা এবং তাঁর সহযোগী গবেষকরা ডাইপার, সিমেন্ট, বালি, কংক্রিট ও জল মিলিয়ে-মিশিয়ে 6 রকমের আলাদা আলাদা মিশ্রণ তৈরি করেন। এক্ষেত্রে ডাইপারগুলোকে জীবাণুমুক্ত করে তারপর শুকিয়ে, ছিঁড়ে মিহি করে নেওয়া হয়। কতটা ভার বহন সক্ষম এই মিশ্রণগুলো, আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে নিরীক্ষণ করে নিরীক্ষকরা তাই বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করেন বলে জানা গিয়েছে জার্নালে।

Bizarre: This house was built from recycled diapers, do you want one?

গবেষণা হল, শুরু বাড়ি তৈরির কাজ…

গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে, ডাইপার ব্যবহার করে একটি ছোট্ট একতলা ঘর বানিয়েছে জুড়াইদা ও তাঁর দলবল। দুটি বেডরুম, একটি শৌচালয়, স্নানাগার ও একটি ডাইনিং স্পেস রয়েছে এই ঘরে। নির্মাণ বিশেষজ্ঞদের মতে, বাড়ি তৈরির উপাদানের প্রায় 27% জুড়েই রয়েছে এই ডাইপার! তিনতলা বাড়ির ক্ষেত্রে উপাদানের হিসেব অনুযায়ী প্রায় 10% ডাইপার ব্যবহার করা যেতে পারে। তাহলেই মজবুত থাকবে বিল্ডিং, এমনই দাবি বিজ্ঞানীদের। যদি থাম বা কড়িকাঠকে বিল্ডিংয়ের অধিকাংশ ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়, সেক্ষেত্রে খুব বেশি ডাইপার ব্যবহার করা যাবে না। যদিও বাগানের ধারের শক্তপোক্ত বেড়া বা বাড়ির অন্যান্য তুলনামূলক হাল্কা স্থানে প্রায় 40% পর্যন্ত ডাইপার ব্যবহার সম্ভব বলে জানিয়েছেন ইঞ্জিনিয়াররা।

সবটা কিন্তু এত সহজ নয়…

যদিও বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে ফেলে দেওয়া ডাইপার তুলে সঠিক পরিমাণে কংক্রিটের সঙ্গে মিশিয়ে দিলেই কেল্লা ফতে নয়! ডাইপারের মধ্যে থাকা প্লাস্টিককে জৈব ফাইবারের থেকে আলাদা করার পদ্ধতি এখনও বেশ ব্যয়বহুল এবং কষ্টসাধ্য। বিভিন্ন দেশের নির্মাণ আইনও যে এই ‘নোংরা’ উপাদান ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করবে, তা-ও মনে করিয়ে দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। “ডাইপার ব্যবহারে কার্বন নিঃসরণ কমতে পারে, তবে এই উপাদানকে ঘর তৈরির যোগ্য করতে যে পরিমাণ রাসায়নিক প্রয়োজন, তা-ও এক অন্যরকম চিন্তার কারণ। তবে, এক্ষেত্রে একবার ব্যবহারযোগ্য ডাইপার ব্যবহারে সমস্যা কমতে পারে অনেকটাই’, জার্মানির ড্রেসডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নবিদ ক্রিস্টোফ স্ক্রফল মনে করেন এমনটাই। আপাতত বিশ্বের উন্নত দেশগুলো ভাবছে, কীভাবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কার্বন নিঃসরণ কমানো যায়, আমাদের দেশও এই পথে কবে চালনা হবে তার উত্তর দেবে ভবিষ্যতই।