Observable Universe: আরও আরও গতি বাড়িয়ে এগোচ্ছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড, কোন অজানা বিপদে বিশ্ব?
Space News: সব উপাদানই একে অপরের দ্বারা আকর্ষিত বা বিকর্ষিত হয়। সূর্য আকর্ষণ করে সৌরমণ্ডলের উপাদানগুলোকে, একইভাবে ছোট গ্যালাক্সিদের আকর্ষণ করে বৃহৎ গ্যালাক্সি, বড় গ্যালাক্সিদের নিজের দিকে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করে সুপারক্লাস্টার বা কোনও 'সুপারম্যাসিভ' ব্ল্যাকহোল।
‘দেখো আমি বাড়ছি মামি…’ বলতে বলতে বেড়ে চলেছে আমার আপনার এই চেনা মহাজগত। তবে মানুষের মতো বছরে কয়েক সেন্টিমিটার বাড়া তার পক্ষে সম্ভব নয়, তার বৃদ্ধি মাপতে লাগে আলোকবর্ষের মাপকাঠি। আর মহাশূন্যের এই বৃদ্ধিতেই সম্প্রতি অস্বাভাবিকত্ব লক্ষ্য করেছেন মহাকাশবিজ্ঞানীরা।
আকারে বাড়ছে মহাকাশ
নীহারিকা, নক্ষত্রপুঞ্জ থেকে নিউট্রন স্টার বা ছায়াপথ ― ‘অবজার্ভেবল ইউনিভার্স’-এর পরতে পরতে লুকিয়ে রয়েছে রহস্য। কোথাও ব্ল্যাক হোল গিলে খাচ্ছে রাশি রাশি নক্ষত্র, কোথাও বা গড পার্টিকল ঘটিয়ে চলেছে কোয়ান্টাম ফিজিক্সের আয়ত্তের বাইরে থাকা কোনও জটিল বিক্রিয়া! এমনই রহস্যে মোড়া জগৎসংসার ফুলে ফেঁপে উঠছে ক্রমশ, বাড়ছে তার বহর। তবে বৃদ্ধির হার যে বেড়েছে আগের থেকে, তা জানাচ্ছেন নাসা-র (NASA) বিজ্ঞানীরা।
অদ্ভূত কিছু ঘটছে মহাশূন্যের সঙ্গে!
ঠিক কোন গতিবেগে বাড়ে ‘ইউনিভার্স’? যুগে যুগে নক্ষত্রবিজ্ঞানীদের ভাবিয়ে তুলেছে এই প্রশ্ন। সালটা 1920, মহাকাশবিজ্ঞানী এডউইন পি.হাবল (Edwin P. Hubble) এবং জর্জেস লিমাইটর (Georges Lemaitre) এ বিষয়ে গবেষণা শুরু করেন। ক্রমশ ১৯৯০ সাল নাগাদ উঠে আসে ‘ডার্ক এনার্জি’-র (Dark Energy) তত্ত্ব। দীর্ঘকালের গবেষণার ফসল হিসাবে বর্তমানে মানবসভ্যতার হাতে এসেছে মহাকাশ গবেষণার ব্রহ্মাস্ত্র ― হাবল স্পেস টেলিস্কোপ (Hubble Space Telescope)। এই দূরবীক্ষণের দৌলতে এমন কিছু ছবি পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা, যাতে এটা স্পষ্ট যে কোনও অজ্ঞাত কারণে অদ্ভুত কিছু ঘটে চলেছে মহাশূন্যের সঙ্গে!
মহাশূন্যে এহেন অসামঞ্জস্য কেন?
মহাজগতের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এই অসামঞ্জস্যের কারণ হিসেবে তেমন কিছু এখনও পর্যন্ত খুঁজে পাননি গবেষকরা। স্পেস টেলিস্কোপ সায়েন্স ইনস্টিটিউটের (Space Telescope Science Institute) সদস্য এবং জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের (Johns Hopkins University) অধ্যাপক অ্যাডাম রেইসের মতে, “অত্যাধুনিক টেলিস্কোপ এবং উন্নততর কসমিক মাইল মার্কারদের কারণে প্রায় পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তবে ঠিক কী কারণে আগের চেয়ে দ্রুত বাড়ছে মহাশূন্য, তা বলা যাচ্ছে না এখনই।” অন্যান্য ছায়াপথের তুলনায় আমাদের ছায়াপথ বেশ ধীরগতিতে এগোলেও গতিবেগ আগের চেয়ে দ্রুত, এমনটাই জানা যাচ্ছে রেইস ও তাঁর বিজ্ঞানী দল কর্তৃক প্রকাশিত জার্নাল থেকে।
বিশ্বের জন্য বিপদবাণী?
জগৎ চরাচরে সব উপাদানই একে অপরের দ্বারা আকর্ষিত বা বিকর্ষিত হয়। সূর্য আকর্ষণ করে সৌরমণ্ডলের উপাদানগুলোকে, একইভাবে ছোট গ্যালাক্সিদের আকর্ষণ করে বৃহৎ গ্যালাক্সি, বড় গ্যালাক্সিদের নিজের দিকে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করে সুপারক্লাস্টার বা কোনও ‘সুপারম্যাসিভ’ ব্ল্যাকহোল। ফলত ঠিক কোন আকর্ষণের জেরে আগের চেয়ে দ্রুত এগিয়ে চলেছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড, তা স্পষ্ট নয় এখনই। তবে পৃথিবীর ন্যায় ক্ষুদ্র গ্রহের জন্য এখনই যে বিপদের ঘন্টি বাজেনি, তা জানিয়ে দিয়েছেন মহাকাশবিদরা।
কোন গিয়ারে চলছে মহাশূন্য?
গত 30 বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ছবি তুলে তথ্য সংগ্ৰহ করে চলেছে হাবল স্পেস টেলিস্কোপ। তিন দশকের ছবি বিশ্লেষণ করে নাসার বিজ্ঞানীরা বুঝতে পেরেছেন যে কোথাও একটা গলদ রয়েছে। প্রতি মেগাপার্সেকে 67.5 কিমি/সেকেন্ড বেগে বাড়ার কথা থাকলেও ব্রহ্মাণ্ডের ক্ষেত্রে এই গতি এখন প্রায় 74 কিমি/সেকেন্ড! গণনার ক্ষেত্রে প্রতি মেগাপার্সেকে ‘মার্জিন অফ এরর’ মাত্র 0.5, সেখানে ত্রুটি প্রায় 6-6.5 কিমি/সেকেন্ড, স্বভাবতই চিন্তিত গবেষকরা। প্রসঙ্গত, 0.00000001 মেগাপার্সেক প্রায় 31 হাজার কিলোমিটারের সমান।