Sleep Problems: হৃদয়ে ‘চোট’ লেগে উড়েছে ঘুম? ওষুধ না খেয়েই এবার আসবে ঘুম…
Insomnia Issue: ঘুমের ওষুধ খেয়ে নানাবিধ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়, ফলে বিরক্ত হন অধিকাংশ রোগীই। এক্ষেত্রে মেলাটোনিন প্রয়োগ করলে ঘুমের সমস্যা কমে যেতে পারে দ্রুত। তবে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল না করলে এই বিষয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে না: স্টেফান এঙ্গেলহার্ট
হৃদয়ে চোট লাগলে যে ঘুম আসে না, তা তো জানে আপামর বাঙালি। তবে হার্ট অ্যাটাক (Heart Attack) বা হৃদযন্ত্রের জটিল সমস্যার ক্ষেত্রে শরীরে আনুষঙ্গিক জটিলতাও যে বাড়ে, তা স্বীকার করে নেন চিকিৎসকরাই। তবে হৃৎপিণ্ড অসুস্থ থাকলে ঘুমের যে দফারফা হওয়ার সম্ভাবনাও সমানুপাতিক হারে বাড়ে, তা এই প্রথম প্রমাণ করতে পারলেন স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা। সায়েন্স (Science) জার্নালে প্রকাশিত এক রিপোর্টে মোতাবেক, হৃদযন্ত্র রোগগ্রস্ত হলে মেলাটোনিন হরমোন (Melatonin Hormone) ক্ষরণ বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে, ফলে ঘুম কমে যেতে পারে অচিরেই!
আপনার মাথা ও হৃদয় কিন্তু সংযুক্ত! যত্ন নিন:
মুখ এবং মাথার মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখে ‘Superior Cervical Ganglion’ ওরফে ‘SCG’। এই নার্ভগুলোর ক্ষতি হলে মগজে মেলাটোনিন হরমোন ক্ষরণ কম হয়। সম্প্রতি ইঁদুর এবং মানুষের কোষের ক্ষেত্রে এই একই প্রবণতা লক্ষ্য করেছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষকদের মতে, এই স্নায়ুগুলির আচরণে সামান্যতম পরিবর্তন হলেই শ্বাস-প্রশ্বাস এবং হৃদস্পন্দনের গতির তারতম্য ঘটে। এর ফলে পিনিয়াল গ্ল্যান্ড (Pineal Gland)-এর কাজকর্মেও ব্যাঘাত ঘটে, কমতে থাকে ঘুম।
কমছে ঘুম, কী বলছেন বিজ্ঞানীরা?
মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ বিশেষজ্ঞ স্টেফান এঙ্গেলহার্টের মতে, গ্যাংলিওন স্নায়ুগুলো আসলে আপনার শরীরের ইলেকট্রিক্যাল সুইচবক্স। হৃদযন্ত্রের সমস্যার জেরে যদি আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে, তাহলে বুঝতে হবে যে ওই স্যুইচবক্সের তারে গণ্ডগোল হয়েছে, শর্ট সার্কিটের ফলে যা অন্যান্য অঙ্গেও সমস্যা তৈরি করেছে! “হৃদয় ও মস্তিষ্কের এই মেলবন্ধন সঠিকভাবে বুঝতে পারলে ঘুম কমে যাওয়ার কারণ সঠিকভাবে বোঝা যাবে”, মত কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সায়েন্সেসের অধ্যাপক ব্রুক আগরওয়ালের।
‘ইনসোমনিয়া’ থেকে সাবধান!
চিকিৎসকদের মতে, হৃদযন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হলে ৭৩% ক্ষেত্রে ঘুমের পরিমাণ কমে, বাসা বাঁধে ‘ইনসোমনিয়া’ (Insomnia)। হার্টের রোগ হলে কমে যায় মেলাটোনিন ক্ষরণ, ইতিপূর্বের প্রত্যেক গবেষণাতেই উঠে এসেছে এমনই তথ্য। তবে এর কারণ এতদিন স্পষ্টভাবে জানতেন যা কেউই। নতুন গবেষণায় হৃদরোগে আক্রান্ত ও হৃদরোগে আক্রান্ত নয়—এমন দুই ধরণের রোগীর মগজ থেকে কোষীয় নমুনা সংগ্ৰহ করেন গবেষকরা। দেখা যায়, হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে SCG-তে নার্ভের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম।
নার্ভে সমস্যা, ইঁদুর নিয়ে গবেষণা!
ইঁদুরের কোষ সংক্রান্ত গবেষণায় বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেন, রোগাক্রান্ত কোষগুলোকে ধ্বংস করে যে ‘ম্যাক্রোফেজ’ কোষ (Macrophages), সেগুলো হৃদরোগে আক্রান্ত ইঁদুরের দেহে উপস্থিত ছিল যথেষ্ট পরিমাণে। ফলত শরীরের অন্দরে প্রদাহ দেখা যায়, দেখা যায় আরও নানাবিধ সমস্যা। প্রভাব পড়ে ইঁদুরটির পিনিয়াল গ্ল্যান্ডে, কমে যায় স্নায়ুর সংখ্যা! এর জেরে দিন-রাতের পার্থক্য বুঝতে মাঝেমধ্যেই অসমর্থ হয় ইঁদুরটি। ইঁদুরটির ঘুম কমতে থাকে মাত্রাতিরিক্ত হারে, ওজন কমে, কমে যায় দেহের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়াও। ইঁদুরের দেহকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে মেলাটোনিন প্রয়োগ করেন বিজ্ঞানীরা, আর তাতেই ম্যাজিক! ইঁদুরের SCG-তে থাকা ম্যাক্রোফেজগুলো ধ্বংস হয় দ্রুত, ফিরে আসে ঘুম, স্বাভাবিক হয় শ্বাস-প্রশ্বাস।
ঘুমের ওষুধ না খেয়েই আসবে ঘুম!
মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের মতে, এখনও পর্যন্ত ইঁদুর এবং মাত্র ১৬ জন মানুষের উপর পরীক্ষিত হয়েছে এই প্রক্রিয়া। ফলত এই বিষয়ে আরও-আরও গবেষণার প্রয়োজন বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। ‘ম্যাক্রোফেজ’-এর পাশাপাশি ‘সাইটোকিন প্রোটিন’ (Cytokines Protein) নিয়ে গবেষণা করলে ঘুমের সমস্যার ক্ষেত্রে নতুন ওষুধ আবিষ্কার সম্ভব বলে মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশ। “ঘুমের ওষুধ খেয়ে নানাবিধ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়, ফলে বিরক্ত হন অধিকাংশ রোগীই। এক্ষেত্রে মেলাটোনিন প্রয়োগ করলে ঘুমের সমস্যা কমে যেতে পারে দ্রুত। তবে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল না করলে এই বিষয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে না,” জানিয়েছেন ওষুধ-বিশেষজ্ঞ স্টেফান এঙ্গেলহার্ট।