Space News: নক্ষত্রের ধুলোর ‘কুসুম’ ছাড়াও গ্রহদের বাবা-মা হতে পারে অন্য গ্রহরা! পৃথিবীর জন্ম তাহলে কীভাবে?

NASA: পৃথিবীও কি বৃহস্পতি ও শনির মতো বৃহৎ গ্রহের ফসল? আদৌ সরাসরি সূর্য থেকেই কি জন্ম আমাদের প্রিয় নীলগ্রহের? সে প্রশ্নের উত্তর অবশ্য সময়ই বলবে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক গবেষকমহল।

Space News: নক্ষত্রের ধুলোর 'কুসুম' ছাড়াও গ্রহদের বাবা-মা হতে পারে অন্য গ্রহরা! পৃথিবীর জন্ম তাহলে কীভাবে?
Follow Us:
| Updated on: Jul 04, 2023 | 4:43 PM

একটা ছোট্ট ডিমের মধ্যে থাকে কুসুম, আর সেই কুসুমের মধ্যে বাস করে প্রাণের প্রথম অস্তিত্ব। একইভাবে গ্রহের ক্ষেত্রে কুসুমের কাজ করে নক্ষত্রের আশপাশ জুড়ে থাকা ‘প্রোপ্ল্যানেটরি ডিস্ক’ (Protoplanetary Disc)। তবে এই রহস্যময় মহাকাশের বহু রহস্যই যে এখনও আমাদের অজানা, তা প্রমাণ করে বিজ্ঞানীদের গবেষণালব্ধ তথ্য। সম্প্রতি ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Warwick) গবেষকদের মহাকাশ গবেষণায় উঠে এসেছে এমন কিছু তথ্য, যা পাল্টে দিতে পারে চিরাচরিত ধারণাকে।

‘প্রোপ্ল্যানেটরি ডিস্ক’―গ্রহের জন্ম এখানেই…

নক্ষত্রের চারপাশে ঘিরে থাকা ডিস্ক মূলত তৈরি হয় গ্যাস, ধুলো এবং অন্যান্য মহাজাগতিক উপাদানের সমন্বয়ে। আর নক্ষত্রের এই জরায়ুকে বিশ্লেষণ করে গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন গ্রহের জন্ম নেওয়ার আরও এক সম্ভাব্য কৌশল। রয়াল অ্যাস্ট্রনমিক্যাল সোসাইটির (The Royal Astronomical Society) জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষণা। নক্ষত্র ছাড়াও গ্রহ থেকেও যে গ্রহের জন্ম সম্ভব, তাই-ই স্পষ্ট হয়েছে সাম্প্রতিক ওই গবেষণায়।

Space News: How the Earth is created? Know how stars give birth to planets?

‘স্যান্ডউইচড প্ল্যানেট ফর্মেশন’―এক নতুন তত্ত্ব

নক্ষত্রের ডিস্কের মধ্যে আগেভাগে তৈরি হয়ে যাওয়া দু’টি গ্রহের মাধ্যমে কীভাবে অপর এক নতুন গ্রহের জন্ম হতে পারে, গবেষণায় তা বুঝতে পেরেছেন মহাকাশবিজ্ঞানীরা। পাশাপাশি থাকা দুই গ্রহের আশপাশে ঘুরতে থাকে ধূলিকণা, পারস্পরিক আকর্ষণের বলে তাদের মাঝে জমতে থাকে। এই ধূলিকণা প্রবল উত্তাপ ও চৌম্বকীয় তরঙ্গের জেরে ক্রমশ আকারে অপেক্ষাকৃত ছোট গ্রহে পরিণত হতে পারে―ফলত দৃশ্যটা হয়ে ওঠে একটা স্যান্ডউইচের মতোই। তাই এই তত্ত্বের নাম ‘স্যান্ডউইচড প্ল্যানেট ফর্মেশন থিওরি’ (Sandwiched Planet Formation Theory)। হয়তো সরাসরি সূর্য থেকে নয়, আশপাশের বৃহদাকার গ্রহ থেকে এভাবেই পুঞ্জীভূত ধূলিকণা সৃষ্টি করেছে বুধ (Mars) ও ইউরেনাসের (Uranus), মত গবেষকদের।

Space News: How the Earth is created? Know how stars give birth to planets?

ডিস্কেই লুকিয়ে রহস্য?

‘প্রোপ্ল্যানেটরি ডিস্ক’ অর্থাৎ তারাদের এই আংটির মতো অঙ্গের মাঝে মাঝে ফাঁকা স্থান (Void) ইতিপূর্বে লক্ষ্য করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। এর কারণ হিসেবে গ্রহের অবস্থানকেই মেনে নিয়েছেন গবেষকরা। ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডরোথি হজকিন’ ফেলোশিপপ্রাপ্ত অধ্যাপক ফারজানা মেরুর কথায়, “আমাদের মতে ডিস্কের মধ্যেই বামনগ্রহের জন্ম হয়। আগে ভাবা হত, ডিস্কের ভিতরে জন্ম নেওয়ার পর ক্রমশ ডিস্কের বাইরে বেরিয়ে আসার সময় বড় হতে থাকে গ্রহ। তবে বেশ কিছু এক্সোপ্ল্যানেটকে নিরীক্ষা করে দেখা যায় যে, তাদের আকৃতিও এই স্যান্ডউইচড গ্রহদের মতোই!” ফলত শুধুমাত্র নক্ষত্র থেকেই গ্রহের জন্ম হয়েছে, এই ধারণা যে ভেঙে যেতে পারে অচিরেই, তা মনে করছেন বহু বিজ্ঞানীই। ‘এক্সোপ্ল্যানেট’ (Exoplanet) আসলে সৌরজগতের বাইরে থাকা যেকোনও গ্রহকেই বলা হয়ে থাকে।

পৃথিবীর জন্ম সূর্য থেকে―সত্যি?

সম্প্রতি রাতের আকাশ খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করার জন্য যে দূরবীক্ষণ যন্ত্রগুলো আবিষ্কৃত হয়েছে, তারা মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। ‘আটাকামা লার্জ মিলিমিটার’ (Atacama Large Millimeter/submillimeter Array) নামক টেলিস্কোপের জন্যই সম্ভব হয়েছে এই দুরূহ গবেষণা, অধ্যাপক ফারজানা মেরু মনে করেন এমনটাই। তাহলে পৃথিবীও কি বৃহস্পতি ও শনির মতো বৃহৎ গ্রহের ফসল? আদৌ সরাসরি সূর্য থেকেই কি জন্ম আমাদের প্রিয় নীলগ্রহের? সে প্রশ্নের উত্তর অবশ্য সময়ই বলবে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক গবেষকমহল।