Bankura School: স্কুলে যেতে ভরসা সবজিওয়ালার ডিঙি! নদীর চরের স্কুল ভুগছে ‘শিক্ষক-শূন্যতার রোগে’
বাঁকুড়া: কথায় আছে নদীর ধারে বাস, চিন্তা বারো মাস। কিন্তু সে তো গেল নদীর ধারে বসবাসকারীদের কথা। কিন্তু যদি বাস হয় নদীর একেবারে মাঝখানে, তাহলে তো আর কথাই নেই! তেমনটাই হয়েছে বাঁকুড়ার মেজিয়া ব্লকের মানাচরের ক্ষুদে পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে। বাঁকুড়ার মেজিয়া ব্লকের মানাচরের অবস্থান একেবারে দামোদরের গর্ভে। দামোদরের বুকে জেগে ওঠা এই চরে একসময় বসবাসকারী পরিবারের […]
বাঁকুড়া: কথায় আছে নদীর ধারে বাস, চিন্তা বারো মাস। কিন্তু সে তো গেল নদীর ধারে বসবাসকারীদের কথা। কিন্তু যদি বাস হয় নদীর একেবারে মাঝখানে, তাহলে তো আর কথাই নেই! তেমনটাই হয়েছে বাঁকুড়ার মেজিয়া ব্লকের মানাচরের ক্ষুদে পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে। বাঁকুড়ার মেজিয়া ব্লকের মানাচরের অবস্থান একেবারে দামোদরের গর্ভে। দামোদরের বুকে জেগে ওঠা এই চরে একসময় বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই সংখ্যা কমতে কমতে এখন কুড়ি পঁচিশে ঠেকেছে। স্বাভাবিক ভাবে মানাচর প্রাথমিক বিদ্যালয়েও কমেছে পড়ুয়ার সংখ্যা।
এত বছরেও পরিকাঠামোর কোনও বদল হয়নি। পাকা স্কুল ভবন আছে, আছে চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ, যথেষ্ট সংখ্যক ক্লাসরুম, মিড ডে মিলের ব্যবস্থা, এমনকি তিন জন শিক্ষক শিক্ষিকাও। কিন্তু পড়ুয়ার সংখ্যা শুনলে বেশ কিছুটা অবাক হতে হয় বইকি। সবমিলিয়ে পড়ুয়ার সংখ্যা মাত্র ১৬ জন। মাঝেমধ্যে দু-চারজন পড়ুয়া স্কুলে আসে। বাকি দিনগুলো মোটামুটি ক্লাসরুম থাকে শূন্যই।
অথচ এই স্কুলেই একসময় পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল পঞ্চাশের ওপরে। কিন্তু কেন এমন হাল? অভিভাবকদের দাবি, শিক্ষক শিক্ষিকারা স্কুলে আসার ক্ষেত্রে কোনও নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করেন না। ইচ্ছেমতো সময়ে স্কুলে আসেন আবার ইচ্ছেমতো স্কুল বন্ধ করে বাড়ি ফিরে যান। প্রায় দিনই স্কুলে যান না প্রধান শিক্ষক। একজন শিক্ষিকা মাতৃত্বকালীন ছুটিতে। ফলে স্কুলের পড়াশোনা লাটে ওঠার জোগাড়।
অগত্যা অনেকেই এই স্কুল ছাড়িয়ে শিশুদের ভর্তি করেছেন নদীর পাড়ে থাকা অন্ডালের বেসরকারি স্কুলে। স্কুলের শিক্ষিকা স্কুলে নির্ধারিত সময়ে আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে যোগাযোগের অভাবকেই দায়ী করছেন। তাঁর দাবি, বাঁকুড়া জেলার দিক থেকেই হোক বা পশ্চিম বর্ধমান জেলার দিক থেকে, যেখান থেকেই স্কুলে যাওয়া হোক না কেন স্থলপথে মানাচরের সঙ্গে বহির্বিশ্বের কোনও যোগাযোগ নেই। দামোদরের ওই অংশে ফেরি সার্ভিসও নেই। অগত্যা স্কুলে যাতায়াতে নির্ভর করতে হয় মানাচরের মানুষদের ব্যাক্তিগত ডিঙির ওপর।
মানাচরের মানুষ উৎপাদিত সবজি অন্ডাল বাজারে বিক্রি করে গ্রামে ফিরলে, তাঁদের ডিঙিতেই মানাচরে পৌঁছন শিক্ষক শিক্ষিকারা। ফেরার সময়ও ভরসা সেটাই।
যদিও স্কুলটির এই হালের জন্য শিক্ষক শিক্ষিকাদের সদিচ্ছার অভাবকেই দায়ী করেছে বাঁকুড়া জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ। বাঁকুড়া জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ সভাপতি বসুমিত্রা সিংহের বক্তব্য, “গোটা বিষয়টি নজরে রয়েছে। উচ্চ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপও করা হবে।”