Jalpaiguri: সন্ধে ঘনালেই নাকি নিশির ডাক, ভূতের তাণ্ডব! ভয়ে সিঁটিয়ে জলপাইগুড়ির এই গ্রাম
Jalpaiguri: গ্রামবাসীরা বলেন, রাত বাড়লেই নাকি গ্রামে শুরু হয়ে ভূতের তাণ্ডব। শোনা যায় নিশির ডাক। কোনও এক অতৃপ্ত আত্মা নাকি ঘুরে বেড়ায় গ্রামের মধ্যে। আর সেই ভয়েই সন্ধে নামলে ভয়ে সিঁটিয়ে থাকেন গ্রামবাসীরা। অশরীরির ভয়ে গোটা গ্রাম ঘরবন্দি হয়ে যায় সন্ধের পর।
জলপাইগুড়ি: আর পাঁচটা গ্রামের সঙ্গে এর কোনও ফাঁরাক নেই। বাড়ি-ঘর, লোকজন, দোকানপাট… সবই আছে। দিনের বেলা সব স্বাভাবিক। কিন্তু সন্ধে নামলেই ছবিটা পুরো বদলে যায় জলপাইগুড়ির গোসাইয়াখারা গ্রামে। জায়গাটি রাজগঞ্জের সুখানি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত। গোটা গ্রামে যেন গা ছমছমে এক পরিবেশ তৈরি হয়ে যায় সন্ধে ঘনাতেই। রাস্তাঘাটে লোকজনের দেখা প্রায় মেলে না বললেই চলে। গ্রামবাসীরা বলেন, রাত বাড়লেই নাকি গ্রামে শুরু হয়ে ভূতের তাণ্ডব। শোনা যায় নিশির ডাক। কোনও এক অতৃপ্ত আত্মা নাকি ঘুরে বেড়ায় গ্রামের মধ্যে। আর সেই ভয়েই সন্ধে নামলে ভয়ে সিঁটিয়ে থাকেন গ্রামবাসীরা। অশরীরীর ভয়ে গোটা গ্রাম ঘরবন্দি হয়ে যায় সন্ধের পর।
বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এই গ্রামে প্রায় ১৪০টি পরিবারের বাস। কিন্তু রাত নামলেই হঠাৎ এমন চেহারা কেন হয় গ্রামে? কীসের ভয় পাচ্ছেন গ্রামবাসীরা? খোঁজখবর নিতে গিয়ে জানা গেল গ্রামবাসীদের এই বদ্ধমূল আতঙ্কের মূল কারণ। গ্রামে বিগত দিনগুলিতে বেশ কয়েকটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। রাতে গ্রামের কোথাও কোথাও আগুন লাগার ঘটনাও ঘটেছে। আর সে-সব থেকেই গ্রামবাসীদের মনে ধারণা তৈরি হয়েছে অশরীরীর আনাগোনার। এই গোসাইয়াখারা গ্রামেই থাকেন আব্দুল গফ্ফর। তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, কিছুদিন আগে গ্রামের এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছিলেন। আব্দুলের বক্তব্য, মৃত্যুর আগে পর্যন্ত কোনও এক অশরীরী ওই মহিলাকে নিয়ন্ত্রণ করত। আর তার জেরে মহিলা প্রলাপ বকতেন। বিভিন্ন ধরনের অস্বাভাবিক আচরণ করতেন।
ডাক্তার-বদ্যিও করা হয়েছিল। অস্বাভাবিক আচরণ যাতে ঠিক হয়ে যায়, তার জন্য বিভিন্ন ওষুধপত্র খেতেন ওই মহিলা। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। শেষে ওই মহিলা একদিন আত্মহত্যা করে ফেলেন। আর তারপর থেকেই গ্রামবাসীদের মনে ধারণা জন্মায়, ভূতের উপদ্রবের। শুধু গফ্ফর নয়, সাত্তার আলি, রহিমা খাতুনদের মতো গ্রামের আরও অনেক মানুষের মনেই একই ধারণা।
সাত্তার-রহিমারা বলছেন, প্রথমে পাড়ার এক যুবকের মৃত্যু হয়েছিল। অস্বাভাবিক মৃত্যু। আর তারপর গ্রামের আরও দুই মহিলার গৃহবধূরও অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, এদের প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই শরীরে অশরীরী ভর করেছিল। গ্রামে একের পর এক এমন ঘটনা ঘটতে থাকায় ভূতের উপদ্রবের ধারণা আরও জাঁকিয়ে বসে গ্রামবাসীদের মনে। আর তারপর থেকেই সন্ধে নামলে একপ্রকার শ্মশানের স্তব্ধতা নেমে আসে গ্রামের রাস্তা-ঘাটে।
বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজের মনরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক স্বস্তিশোভন চৌধুরীর সঙ্গে। তাঁর বক্তব্য, ‘কেউ মারা গেলে, তাঁর অস্তিত্বের কথা ছোটদের বলা হয়। তা নিয়ে ছোটদের ভয় দেখানো হয়। অনেকক্ষেত্রেই এই ভয় বড় হওয়ার পরেও মানুষের মধ্যে থেকে যায়। তাছাড়া যখন এলাকার কেউ এই ধরনের কথা বলেন, তখন বাকিরাও সেটিকে বিশ্বাস করতে শুরু করে দেন। এভাবেই ভূতের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।’ ওই গ্রামের মানুষদের মন থেকে এই জাতীয় অমূলক ভীতি দূর করতে যাতে বিজ্ঞান মনস্ক সংগঠন এবং প্রশাসন এগিয়ে আসে সেই বার্তাও দেন তিনি।