Mizoram Rail Bridge Collapse Death: এক একটা পাড়াই এখন পুরুষশূন্য! মিজোরামের অভিশপ্ত ব্রিজ ধসিয়ে দিল মালদহের ২৪টা পরিবারকেও
Mizoram Rail Bridge Collapse Death: গোটা আজ স্তব্ধ। বুধবার সন্ধ্যায় যখন এ খবর সম্প্রচারিত হয়েছে টিভিতে, তখনও হয়তো টিনের চালের ঘুপচি ধরের পরিবারগুলো জানে না।
মালদহ: মিজোরামের নির্মীয়মান রেলসেতু দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিজনদের সঙ্গে দেখা করতে বৃহস্পতিবার মালদহে যাচ্ছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী। মিজোরামে নির্মীয়মান সেতু ভেঙে বুধবার বহু শ্রমিকের মৃত্যু হয়। মৃতদের অধিকাংশই মালদহের বাসিন্দা। এখনও পর্যন্ত জানা যাচ্ছে, কেবল মালদহেই ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। গোটা জেলা আজ বাকরুদ্ধ।
মালদহের ইংরেজবাজার ব্লক, গাজোল, কালিয়াচকের প্রত্যন্ত কিছু গ্রাম রয়েছে, যেখানকার অধিকাংশ পরিবারেরই পুরুষ সদস্য কাজের খোঁজে যান ভিন রাজ্যে। তার মধ্যে মিজোরাম একটি অন্যতম জায়গা। কারোর ছেলে, ছেলের বন্ধু, বাবা কিংবা কাকা, বাড়ির দুই ভাই-লোকমুখে মিজোরামের কাজের কথা ছড়িয়েছিল। ‘মিডিলম্যানের’ সূত্র ধরে আর পাঁচ জন পরিযায়ী শ্রমিকের মতো মালদহের বিভিন্ন ব্লকের ওই ২৪ জনও কাজে গিয়েছিলেন মিজোরামে। অভিশপ্ত সেই ব্রিজ নির্মাণে লেবারের কাজে লেগেছিলেন। ‘রোজ’ যে সেখানে বেশি! বাড়তি দু’পয়সা বেশি নিয়ে পুজোর পর ঘরে ফেরার কথা ছিল তাঁদের। তাঁরা ফিরছেন বটে, কিন্তু কফিনবন্দি হয়ে।
গোটা মালদহ আজ স্তব্ধ। বুধবার দুপুরে যখন এ খবর সম্প্রচারিত হয়েছে টিভিতে, তখনও হয়তো টিনের চালের ঘুপচি ধরের পরিবারগুলো তা দেখেইনি। কোনও প্রতিবেশী কিংবা গ্রামের মোড়লের বাড়ির টিভিতে যখন বড় করে সেই খবর চলছে, তখন এক লহমায় গোটা পৃথিবীটা যেন অন্ধকার হয়ে গিয়েছে তাঁদের। মৃতদের মধ্যে রতুয়া, ইংরেজবাজার, গাজোল, কালিয়াচকের প্রচুর বাসিন্দা রয়েছেন। কোথাও কোথাও এমনও রয়েছে, যেখানে এক বাড়ির বাবা-কাকা-ছেলে গিয়েছিলেন কাজে। মৃত্যু হয়েছে একই পরিবারের চার সদস্যের।
গ্রামবাসীদের কেউ কেউ বলছেন, “আমাদের পাড়া তো পুরুষ শূন্য হয়ে গেল।” ইংরেজবাজারে বিনোদপুরের এমন একটি পরিবারের খোঁজ মিলেছে, যেখানে বাবা-ছেলে-নাতি-সহ চার জনের মৃত্যু হয়েছে। এরকম একটা পরিবার নয়, একাধিক রয়েছে। সেই পরিবারে আরও কোনও পুরুষ সদস্যই জীবিত নেই। রতুয়াতেও এমন বেশ কিছু পরিবার রয়েছে, যেখানে একই বাড়ির ২-৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গ্রামবাসীদের এক জন বলছেন, “আসলে আমাদের এখানে কাজ কই? সব কাজ তো বাইরেই। আমাদের এখানে এমনটাই হয়। এক বাড়ির কেউ গেলে, সেই বাড়ির বাকিদের, কিংবা পাড়ার লোককেও কাজে নিয়ে যায়। এখানেই সেই হয়েছে। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল… পরিবারগুলোর কী হবে!”
এমনিতেই পরিসংখ্যান বলছে, মালদহ থেকেই সবচেয়ে বেশি শ্রমিক ভিন রাজ্যে কাজের খোঁজে যান। কিন্তু নিরাপত্তা কোথায়? উত্তর বড়ই জটিল। এখন মালদহের বুকে কান্নার রোল।
বৃহস্পতিবার বিধানসভাতেও এই প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়। হবিবপুরের বিজেপি বিধায়ক জুয়েল মুর্মু বলেন, “মালদার ২৩ জন পরিযায়ী শ্রমিক মিজোরামে মারা গিয়েছেন। এটা দুঃখের বিষয়। আমাদের রাজ্যের এক একেকটা গ্রাম থেকে ২০০-৩০০ মানুষ কাজে যাচ্ছেন অন্য রাজ্যে। কাজ না-পেয়ে বাইরে যাচ্ছেন। আর এই ঘটনা ঘটছে। এটা দুঃখজনক। পরিবার চালানোর জন্য আমাদের ভিনরাজ্যের যেতে হচ্ছে। ৫০ লক্ষের বেশি মানুষ ভিনরাজ্যে আছেন।” মৃতদের পরিবারকে অনুদান দেওয়ার দাবি তুলেছেন তিনি।
বুধবারই প্রধানমন্ত্রী, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মৃতদের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী মৃতদের পরিবারগুলিকে ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। বাংলার তরফে এই দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারগুলির জন্য কী করা হয়, তার দিকেই তাকিয়ে অসহায় মুখগুলো।