Nawsad Siddique: এ কোন নওশাদ! জন্মভিটেতে ‘ঢিল’ পড়তেই পুলিশকে আঙুল উঁচিয়ে তুই-তুকারি
Nawsad Siddique: মৃদুভাষী নওশাদ যখন গ্রেফতার হয়েছিলেন, তখনও তিনি ছিলেন শান্ত। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরও সে অর্থে শাসক, প্রশাসনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বিরোধিতার বাইরে চড়া সুরে মুখ খোলেননি। কোনও সময়েই রাজনৈতিক সৌজন্য হারাতে তাঁকে দেখা যায়নি।
হুগলি: পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে থেকেই ভাঙড়ের যে পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, তা ক্রমশ ভয়াবহ হয়েছে নির্বাচন পরবর্তী পর্যায় পর্যন্ত। বোমাবাজি হয়েছে, গুলি চলেছে, একাধিক ‘লাশ’ পড়েছে, রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে একাধিক। এমনকি নিজের এলাকাতেও ঢুকতে গিয়ে পুলিশি বাধার মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। তবু রাস্তায় ঠায় বসে থেকে অপেক্ষা করেছেন, মোবাইল ঘেঁটেছেন। মোটের উপর গান্ধীগিরিই করে গেছেন। একাধিক অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতেও তাঁকে দেখা গিয়েছে ঠান্ডা মাথায়। কিন্তু সেই নওশাদ সিদ্দিকিকেই বৃহস্পতিবার দেখা গেল এক্কেবারে অন্য মেজাজে। তিনি রাগলেন, বলা ভালো মেজাজ হারালেন, পুলিশ কর্তার সঙ্গে কথা বলার সময়ে হারিয়ে ফেললেন সৌজন্যও। আঙুল উঁচিয়ে, গলার শিরা ফুলিয়ে চিৎকার করলেন মৃদুভাষী, শান্ত স্বভাবের একমাত্র আইএসএফ বিধায়ক, যাঁকে এর আগে এইভাবে দেখেনি বাংলার বাংলার সাধারণ মানুষ।
বৃহস্পতিবার ছিল হুগলির জাঙ্গিপাড়ায় ফুরফুরা পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন। সকাল থেকেই বোর্ড গঠন ঘিরে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে। এলাকায় ব্যাপক বোমাবাজি হয়, পুলিশকে লক্ষ্য করে হয় ইটবৃষ্টিও চলে। এরই মধ্যে নওশাদের বাড়ি লক্ষ্য করে ইট ছোড়ার অভিযোগ ওঠে। এক পুলিশকর্মীকে ইট ছুড়তে দেখা যায় বলে অভিযোগ। সেই ভিডিয়ো বিধায়কের কাছে এসে পৌঁছয়। তাতেই ক্ষেপে ওঠেন বিধায়ক। যদিও সেই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি TV9 বাংলা।
এরপরই এলাকায় পরিস্থিতি সামলা দিতে যে বাহিনী ছিল, তাদের দিকে কার্যত একাই এগিয়ে আসেন বিধায়ক। পুলিশকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার সময়ে বেশ মেজাজ হারান।
পুলিশকে বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি আঙুল উঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করতে থাকেন, ‘কে আছেন?’ এক পুলিশ কর্মীর উদ্দেশে বলেন, ‘তুমি কোন পদে রয়েছ? আমার বাড়িতে ঢিল ছোড়া হয়েছে কেন?’ এই সময় নওশাদ দৃশ্যতই অত্যন্ত ক্রদ্ধ। এরপরও তিনি মেজাজ হারিয়েছেন। তাঁর চোয়াল শক্ত, গলার শিরা ফুলে উঠেছে। নওশাদকে বলতে শোনা যায়, ‘বাঁদরামি ছুটিয়ে দেব…’ সেসময় অন্য এক পুলিশ কর্মী নওশাদকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। নওশাদ তাঁর দিকে ঘুরে আঙুল উঁচিয়ে বলেন, “জাস্ট শাট আপ… আপনার থেকে সিনিয়র অফিসারের সঙ্গে কথা বলছি…” সিনিয়র অফিসার বলেন, “আপনি একজন সিনিয়র অফিসারের সঙ্গে এইভাবে কথা বলছেন?” নওশাদ বলেন, “আপনি জানেন কার বাড়িতে ঢিল ছোড়া হয়েছে?” নওশাদ আঙুল উঁচিয়েই বলতে থাকেন, “আপনার বাড়ির কাচ ভেঙেছে? আপনার বাড়িতে কেউ ঢিল ছুড়েছে?”
অথচ মৃদুভাষী নওশাদ যখন গ্রেফতার হয়েছিলেন, তখনও তিনি ছিলেন শান্ত। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরও সে অর্থে শাসক, প্রশাসনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বিরোধিতার বাইরে চড়া সুরে মুখ খোলেননি। কোনও সময়েই রাজনৈতিক সৌজন্য হারাতে তাঁকে দেখা যায়নি। তবে এদিন ফুরফুরা শরিফে তাঁকে যেভাবে দেখা গেল, তা সত্যিই তাঁর ‘স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমা’ নয়, বলছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
ফুরফুরায় দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ চলছে এখনও (বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টে)। কাঁদানে গ্যাসের সেল ছোড়া হচ্ছে। এই প্রতিবেদনটি যখন প্রকাশিত হচ্ছে, নওশাদ তখনও রাস্তায় বসে রয়েছেন। শ্রীরামপুর জাঙ্গিপাড়ায় চলছে পথ অবরোধ। রাজনৈতিক জন্মভূমিতে শত উত্তেজনাতেও যে নওশাদ সৌজন্য ও পরিণতি বোধে অটল থেকেছেন, জন্মভিটেতে আক্রমণের সম্মুখীন হয়ে সেই নওশাদই সম্পূর্ণ বিপরীত আচরণ করলেন। এখন দেখার এদিনের আচরণ নেহাতই ব্যতিক্রম হয়ে থাকবে নাকি দক্ষ ক্রিকেটারের মতো স্টান্স বদলাবেন নওশাদ সিদ্দিকি। এবার থেকে কি তাহলে মারমুখী ভাইজান?