Ishwar Chandra Vidyasagar: ‘আমিই বিদ্যাসাগরের নাতি’, উত্তর পুরুষ নিয়ে তুমুল ঝামেলা বীরসিংহ গ্রামে
Medinipur: প্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বংশের কেউ নন। যা প্রচার চলে সবটাই মিথ্যা। কিন্তু এতদিন কেন তিনি প্রকাশ্যে কিছু বললেন না? প্রসাদবাবুর দাবি, বিদ্যাসাগরমশাই নিজেও প্রচার বিমুখ ছিলেন।
ঘাটাল: বিদ্যাসাগরের বংশধর কে, তা নিয়ে তুমুল বিতণ্ডা বিদ্যাসাগরেরই গ্রামে। মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে বিদ্যাসাগরের স্মৃতি মন্দির। সোমবার সেখানেই তুমুল তর্ক বিতর্ক চলল প্রকৃত বংশধরের দাবিদার কে তা নিয়ে। দুপুর গড়িয়ে যা বিকেল অবধি চলে। আর তা দেখতে এলাকায় ভিড় জমে যায়। অনেকে রীতিমতো বিরক্তিও প্রকাশ করেন। বিদ্যাসাগরের ভিটেয় দাঁড়িয়ে এমন কাণ্ডে অবাক হয়ে যান তাঁরা। একদিকে ছিলেন অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়। যাঁর দাবি, তিনি বিদ্যাসাগরের মেয়ের দিকের। অন্যদিকে ছিলেন প্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি দাবি করেন, বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বংশধর তথা ঈশানচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাতি তিনি।
ঘাটালের বীরসিংহ গ্রাম ছাড়িয়ে জেলা এমনকী রাজ্যেও অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচিতি। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁকে বিদ্যাসাগরের পরিবারের লোক হিসাবেই পরিচয় করানো হয়। বিভিন্ন সম্মানও পেয়েছেন তিনি। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পোস্টারেও তাঁর নাম ছাপানো হয়েছে। যদিও অমিতাভবাবুর দাবি, তিনি কোনওদিনই বিদ্যাসাগরের বংশধর বলে নিজেকে দাবি করেন না। তিনি উত্তরসূরী লেখেন এবং মিশন বিদ্যাসাগর লেখেন। অনেকে তাতেই ভুল করে নিজেকে বিদ্যাসাগরের বংশধর ভেবে নেন।
এ নিয়ে কলকাতা নিবাসী প্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরেই চাপানউতর চলছিল। সোমবার দুপুরে মুখোমুখি হন তাঁরা। দু’পক্ষই এসে পৌঁছয় বীরসিংহ গ্রামে। সেখানেই মাইক্রোফোন নিয়ে দু’পক্ষ নিজেদের সমর্থনে তথ্যপ্রমাণ তুলে ধরার চেষ্টা করেন। অমিতাভ বন্দোপাধ্যায় তাঁর বংশগত ইতিহাস তুলে ধরেন। অন্যদিকে প্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় তুলে ধরেন তাঁর বংশগত ইতিহাসও। দীর্ঘক্ষণ স্মৃতিমন্দিরে চলে এই দড়ি টানাটানি। যদিও শেষে দেখা যায় বিদ্যাসাগরের ভাই ঈশানচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাতি প্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বংশের কেউ নন। যা প্রচার চলে সবটাই মিথ্যা। কিন্তু এতদিন কেন তিনি প্রকাশ্যে কিছু বললেন না? প্রসাদবাবুর দাবি, বিদ্যাসাগরমশাই নিজেও প্রচার বিমুখ ছিলেন। সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করেই তাঁরা আড়ালে থেকেছেন। তবে অমিতাভবাবুর প্রচারের আলোতে উঠে আসায় এবার সামনে এসেছেন বলে দাবি করেন। তাঁদের আবেদন, কখনও যেন অমিতাভবাবু নিজেকে বিদ্যাসাগরের উত্তরসূরীও না বলেন।
তবে অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “সব সম্মানেই লেখা আছে উত্তর পুরুষ অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়। মিশন বিদ্যাসাগর লেখা আছে। অনেকে ভুল করে ভাবেন বিদ্যাসাগরের উত্তরসূরি লিখেছে। আমি তো চাইছি কেউ এগিয়ে এসে বলুন, তিনি বিদ্যাসাগরের পরিবারের সদস্য।”
তবে এ নিয়ে বিষয়টি নিয়ে বিদ্যাসাগর স্মৃতি মন্দির কমিটির সেক্রেটারি শক্তিপদ বেরা বলেন, “অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে আমাদের মনে একটা প্রশ্ন ছিল। ২০২১ সালে উনি প্রথম এখানে আসেন সমাজসেবামূলক কাজ করতে। উনি সে সময় বলেছিলেন উনি বিদ্যাসাগরের উত্তর পুরুষ। বলেছিলেন, মেয়ের দিকে সম্পর্ক তাঁর। যদিও এখন উনি মেনে নিয়েছেন উনি বিদ্যাসাগরের বংশধর লিখবেন না। অন্যদিকে বিদ্যাসাগর মশাইয়ের ছোটভাই ঈশানচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের বংশধর হিসাবে এসেছেন প্রসাদবাবু। তবে আমাদের মনে হয় বিদ্যাসাগরমশাই এতটাই মহান, তাঁর বংশধর, উত্তরসূরী বলে নিজেকে পরিচয় না করিয়ে অনুরাগী হিসাবে পরিচয় করালেই ভাল। আজ সব সমাধান হয়ে গেল। আমরা সকলেই বিদ্যাসাগর-অনুরাগী, আদর্শের প্রচারক। আমাদের অনুরোধ থাকবে কেউ যেন এরকম কিছু না লেখেন।”