Sunil Pal: শুধু মা নয়, বাবা কুকুরও যত্ন নেয় সন্তানের! বিশ্বের দরবারে প্রথম দেখিয়েছিলেন বাঙালি গবেষক
Street Dog: গত বছরই কুকুরের শাবকের প্রতিপালন সংক্রান্ত একটি পেপার প্রকাশ করেছেন তিনি। সেই পেপার নিয়ে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে গ্রিসের ম্যাসিডোনিয়ার ওহরিড বিশ্ববিদ্যালয়।
অংশুমান গোস্বামী
কাটোয়া: সন্তানপালনে মায়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তা সে মানুষ হোক বা অন্য কোনও প্রাণী। কুকুরের ক্ষেত্রে সন্তানপালনে মুখ্য ভূমিকা নেয় মা কুকুর। সারমেয় শাবকদের বড় করে তুলতে বাবা কুকুরের কোনও ভূমিকা থাকে না- এই ধারণা দীর্ঘ দিন ধরেই প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয়, তা প্রথম বলেন এ রাজ্যের এক প্রাণী বিজ্ঞানী। নিজের গবেষণায় তিনিই প্রথম দেখান, বাচ্চা জন্মের পর মা কুকুরের পাশাপাশি একটি সময় পর্যন্ত শাবকদের যত্ন নেয় বাবা কুকুররাও। অ্যাপ্লায়েড অ্যানিম্যাল বিহেভিয়র সায়েন্স (Applied Animal Behaviour Science) পত্রিকায় সেই গবেষণা প্রকাশিত হয়। সেই গবেষণা স্বীকৃতি পেয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। তার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রাণী বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন এই পর্যবেক্ষণ।
বাঙালি ওই প্রাণীবিজ্ঞানীর নাম সুনীল পাল। পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার বাসিন্দা তিনি। কাটোয়া ভারতী ভবন হাইস্কুলের জীববিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন। কিন্তু পাঠ্যবইয়ের গতানুগতিক সিলেবাসের মধ্যেই নিজেকে বন্দি করে রাখতে চাননি তিনি। তাই শিক্ষকতার পাশাপাশি নিজের উদ্যোগেই শুরু করেন গবেষণার কাজ। রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো কুকুরদের বিভিন্ন আচরণ ছিল তাঁর গবেষণার বিষয়বস্তু। সেই কাজ প্রায় দু’দশক ধরে করে যাচ্ছেন তিনি। বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিজ্ঞান পত্রিকায় বছরের পর বছর ধরে তাঁর পেপার প্রকাশিত হয়েছে। প্রায়শই বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণা পত্র পাঠের আমন্ত্রণ আসে। তিনি কুকুরের বিভিন্ন আচরণ যে সব দিক নিজের গবেষণার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন, তা আন্তর্জাতিক মহলে বার বার সমাদৃত হয়েছে। গত বছরই কুকুরের শাবকের প্রতিপালন সংক্রান্ত একটি পেপার প্রকাশ করেছেন তিনি। সেই পেপার নিয়ে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে গ্রিসের ম্যাসিডোনিয়ার ওহরিড বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে যাবেন বলেও জানিয়েছেন গবেষক সুনীল পাল।
কুকুর শাবকের প্রতিপালনে পিতা কুকুরের ভূমিকার ব্যাপারে সুনীল পাল বলেছেন, “১৯৮৪ সালে ডিজি ক্ল্যাইম্যান নামের আমেরিকার এক মহিলা গবেষক জানিয়েছিলেন পুরুষ কুকুর বাচ্চাদের যত্ন নেয় না। কিন্তু আমি গবেষণার মাধ্যমে প্রথম দেখিয়েছিলাম জন্মের পর আট সপ্তাহ পর্যন্ত সন্তানের যত্ন নেয় সম্ভাব্য পুরুষ কুকুর। এই পর্যবেক্ষণ এখন আন্তর্জাতিক মহলে অনেকেই তা প্রমাণ করেছেন।” কী ভাবে পিতা কুকুর যত্ন নেয়, সে কথাও জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, “বাচ্চার জন্মের পর থেকেই তাঁদের সম্ভাব্য পিতা ওই বাচ্চাগুলির কাছাকাছি থাকে। মায়ের অনুপস্থিতিতে যাতে অন্য কোনও কুকুর বা প্রাণী তাদের আক্রমণ করতে পারে না। সে দিকেও নজর রাখে তারা। পাশাপাশি অর্ধপাচ্য খাবার বমি করে বাচ্চাদের খাইয়েও থাকে পিতা কুকুর। অর্ধেক হজম করা খাবার বমি করে খাওয়ানোকে বলে regurgitation পদ্ধতি। সাধারণত জন্মের ৮ সপ্তাহ পর্যন্ত বাচ্চাদের যত্ন নিয়ে থাকে বাবা কুকুর।”
সন্তান প্রতিপালন নিয়ে ২০২১ সালে ‘Pup rearing: role of mothers and allomothers’ নামের একটি পেপার প্রকাশ করেছেন কাটোয়ার এক প্রাণীবিজ্ঞানী। সেই পেপারে তিনি দেখিয়েছেন, কুকুর শাবকদের মায়ের অনুপস্থিতিতে কী ভাবে তাদের মাসি, দিদা, বোন বা দিদি বাচ্চাদের প্রতিপালন করে। এ ব্যাপারে সুনীলবাবু বলেছেন, “কুকুর সাধারণত বড় দল গঠন করে না। ছোট ছোট দলেই থাকতে দেখা যায়। একই দলে কোনও স্ত্রী কুকুরের মা, মাসি বা বোনও রয়েছে। এখন কোনও স্ত্রী কুকুর সন্তানের জন্ম দিল। একই কালে সেই কুকুরের মা বা বোনও সন্তানের জন্ম দিল। কোনও মা কুকুর তার নিজের সন্তানের পাশাপাশি হয়তো তার মায়ের সন্তান বা বোনের সন্তানকেও স্তন্যপান করাচ্ছে। বা সন্তান জন্মের পর দুর্ঘটনায় কোনও মা কুকুরের মৃত্যুর পরও অন্য স্ত্রী কুকুর সেই মৃত কুকুরের সন্তানদের স্তন্যপান করাচ্ছে বা যত্ন নিয়ে বড় করে তুলছে।” তিনি জানিয়েছেন, এই ঘটনাকে বলে অ্যালোমাদারিং (Allomothering)। এই বিষয় নিয়েই এ বছর গ্রিসের বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের গবেষণা পাঠ করবেন নিজের উদ্যোগে গবেষণা করা সুনীলবাবু।
বিষয়টি নিয়ে প্রাণী চিকিৎসক সিদ্ধার্থ কুমার নাথ বলেছেন, “মায়ের পাশাপাশি বাবারাও অনেক প্রাণীদের ক্ষেত্রেই শাবকদের যত্ন নিয়ে থাকে। এটা খুবই প্রাকৃতিক ঘটনা।”