TV9 Explained: কেন বারবার রাস্তায় কুড়মিরা? ভোট-রাজনীতিতে কতটা ‘দামি’ প্রাচীন এই জনগোষ্ঠী?

Kurmi Protest: এক প্রাচীন জনগোষ্ঠীর নাম কুড়মি। মূলত বর্তমান ঝাড়খণ্ড ও তার সংলগ্ন এলাকায় এই জনগোষ্ঠীর একসময় বসবাস ছিল বলে জানা যায়।

TV9 Explained: কেন বারবার রাস্তায় কুড়মিরা? ভোট-রাজনীতিতে কতটা 'দামি' প্রাচীন এই জনগোষ্ঠী?
কুড়মি আন্দোলন
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Apr 11, 2023 | 6:06 PM

বিক্ষিপ্ত বিক্ষোভ নয়। গত কয়েকদিন ধরে দক্ষিণবঙ্গের একটা বড় অংশে টানা বিক্ষোভ। রেল অবরোধ। একের পর এক দূরপাল্লার ট্রেন বাতিল করতে হয়েছে। অনেক অনুরোধ-উপরোধেও চিঁড়ে ভেজেনি। আর এই আন্দোলন কোনও রাজনৈতিক দলের নয়। এই আন্দোলন কুড়মি সম্প্রদায়ের। একাধিক দাবিতে পথে নামেন তাঁরা। কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষ আন্দোলন করেছেন আগেও, তবে এবার সেই আন্দোলন তীব্রতর। সেই আগুনের আঁচ যে পঞ্চায়েত ভোট পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে, তেমনটাও মনে করছেন বিশ্লেষকরা। জনজীবন স্তব্ধ করে দেওয়া সেই আন্দোলনে কি আদৌ কোনও লাভ হল? কেনই বা এই আন্দোলন?

কুড়মি সম্প্রদায়ের ইতিহাস

এক প্রাচীন জনগোষ্ঠীর নাম কুড়মি। মূলত বর্তমান ঝাড়খণ্ড ও তার সংলগ্ন এলাকায় এই জনগোষ্ঠীর একসময় বসবাস ছিল বলে জানা যায়। পরবর্তীতে কালের নিয়মে তারাও এপাশ-ওপাশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়েছে। মাহাতো বলেও অনেকের কাছে পরিচিতি রয়েছে কুড়মিদের। কারণ এই সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ মানুষের পদবী মাহাতো। অন্যান্য প্রাচীন জনগোষ্ঠীর মতো এদেরও নিজস্ব কিছু রীতি-নীতি, ধর্ম-উপাসনার প্রচলন রয়েছে। এরা নিজেদের মধ্যে যে ভাষায় কথা বলেন, তার নাম কুড়মালি। বর্তমানে তাঁরা ওবিসি হিসেবে চিহ্নিত হন।

পশ্চিমবঙ্গে কোথায় কত কুড়মি?

পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম সহ মূলত জঙ্গলমহল ঘেঁষা জেলার একাধিক ব্লকেই রয়েছে কুড়মিদের বসবাস। পুরুলিয়ায় কুড়মিদের সংখ্যা সবথেকে বেশি বলে জানা যায়। এই জেলার বেশ কয়েকটি ব্লক কুড়মি প্রধান। বর্তমানে এই সম্প্রদায়ের মানুষেরা নিজেদের পুরুলিয়ার প্রাচীন অধিবাসী বলে দাবি করছে।

পুরুলিয়া জেলার মোট জনসংখ্যার মধ্যে কুড়মি জনজাতির বসবাস প্রায় ২৪ শতাংশ। বাঁকুড়ায় ৫-৬ শতাংশ কুড়মি রয়েছেন আর ঝাড়গ্রামের জনসংখ্যার মধ্যে ৩০ শতাংশের বেশি কুড়মি বলে জানা যায়।

কী দাবি কুড়মিদের?

কুড়মিদের বেশ কয়েকটি দাবি রয়েছে।

১. কুড়মিদের তফশিলি উপজাতির মর্যাদা দিতে হবে। এজন্য সিআরআই (কালচারাল রিসার্চ ইন্সটিটিউট)-এর রিপোর্টে প্রয়োজনীয় অনুমোদন প্রয়োজন।

২. কুড়মিদের ধর্ম সারনাকে স্বীকৃতি দিতে হবে।

৩. কুড়মিদের ভাষা কুড়মালি-কে সংবিধানের অষ্টম তফসিলের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

সরকার কি কথা শুনছে?

কুড়মিদের অভিযোগ, এই সব দাবি পূরণের জন্য বহুদিন ধরে আন্দোলন চললেও রাজ্য সরকার তেমন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। খুব বেশি দিন আগে নয়, গত বছরের (২০২২) সেপ্টেম্বর মাসে কুস্তাউর এবং ক্ষেমাশুলিতে টানা পাঁচ দিনের রেল অবরোধ করা হয় আদিবাসী কুড়মি সমাজের পক্ষ থেকে। অভিযোগ, সে সময় কুড়মিদের তপশিলি উপজাতি অন্তর্ভুক্ত করার দাবি মেনে নেওয়ার কথা বলেছিল রাজ্য সরকার। আর সেই আশ্বাসেই নাকি রেল অবরোধ উঠে যায়। তারপরও দাবি পূরণের কোথায় কী? তাই এবার আরও বৃহত্তর আকারে পথে নামেন কুড়মিরা।

কুড়মি সমাজের নেতা অজিত প্রসাদ মাহাতো তাই ফের আন্দোলনের ডাক দেন। যার জেরে এপ্রিল মাসের পাঁচ তারিখ থেকে রেল এবং সড়ক অবরোধ চলে।

বাড়ছে ক্ষোভ, শাসকের সঙ্গে কি থাকবেন কুড়মিরা?

যাবতীয় দায়ভার সরকারের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন কুড়মিরা। বিক্ষোভ মঞ্চ থেকেও কুড়মি নেতারা সরাসরি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। এই পরিস্থিতিতে অজিত প্রসাদ মাহাতো দাবি করেন, গত শনিবার থেকেই অবরোধ তোলার জন্য প্রশাসনের তরফে মারাত্মক চাপ দেওয়া হচ্ছিল। তিনি স্বীকারও করে নেন, এই চাপের কাছেই কার্যত আন্দোলন প্রত্যাহার করতে হয়েছে তাদের।

তবে আপাতত আন্দোলন প্রত্যাহার করা হলেও আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে এর প্রভাব ভালই পড়বে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কুস্তাউর এবং কোটশিলা স্টেশনে উপস্থিত বিক্ষোভকারীদের অনেকেই সরাসরি দাবি করেছেন আগামী নির্বাচনগুলিতে ঘাসফুল শিবিরের পাশে আর থাকবেন না তাঁরা। অনেকেই ঘুরিয়ে বিরোধী দল বিজেপির কথা বলছেন।

কী বলছেন রাজনৈতিক নেতারা?

পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার বক্তব্য, আদিবাসী কুড়মি সমাজ সামাজিক আন্দোলন করলেও রাজনীতির সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই। তাঁর দাবি, এই সংগঠনের অনেককে বিপথে চলিত করার জন্য ইন্ধন জোগাচ্ছে বিজেপি। তাদের লোকেরাই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে বাজার গরম করার চেষ্টা করছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। তাঁর মতে, শাসকদলের বিরুদ্ধে সরব কুড়মি নেতাদের সংখ্যা এতই কম যে ভোটে কোনও প্রভাব পড়বে না। বেশিরভাগ কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষ তাঁদের সঙ্গেই রয়েছেন বলে দাবি সৌমেন বেলথরিয়ার। কুড়মিদের দাবিদাওয়াগুলি রাজ্যের তরফে কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জেলা বিজেপি সভাপতি বিবেক রাঙ্গা অবশ্য সরাসরি দাবি করেন, এটি সামাজিক আন্দোলন। রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার সংবিধানের নীতি মেনে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবে বলে জানান তিনি। এতে রাজনৈতিক ভাবে বিজেপির কোনও অবস্থান নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সব জেলাগুলিতে কুড়মিদের থেকে আদিবাসীদের (সাঁওতাল ও অন্যান্য) সংখ্যা বেশি। আদিবাসী, যাঁরা তপশিলি উপজাতির অন্তর্ভুক্ত, তাঁরা কুড়মিদের দাবির বিপক্ষে। সে কারণেই রাজনৈতিক নেতারা কোনও নির্দিষ্ট অবস্থান নিচ্ছেন না। ভোটের মুখে কোনও পক্ষকেই অসন্তুষ্ট করতে চান না তাঁরা।