West Bengal Panchayat Elections 2023: উত্তরের হাওয়ায় দুলছে জোড়া ফুল, পায়ের তলায় জমি ধরে রাখার লড়াই চালাচ্ছে বিজেপি
West Bengal Panchayat Elections 2023: এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে (এখনও পর্যন্ত যা ফল প্রকাশ হয়েছে) যা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে মোটেই সেই পথে পদ্ম পাপড়ি বিছোনো নেই, বরং আগামী লোকসভা নির্বাচনের জন্য কাঁটা হয়ে থাকতে বিজেপির কাছে। উত্তরবঙ্গের সার্বিক রেজাল্ট বিজেপিকে চিন্তায় রাখছে বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের।
কলকাতা: গত লোকসভা থেকে উত্তরবঙ্গে যে উত্তরণের পথ প্রশস্ত করেছিল গেরুয়া শিবির, একুশের বিধানসভা নির্বাচনেও সেই পথে বিছিয়েছিল পদ্মের পাপড়ি। কিন্তু এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে (এখনও পর্যন্ত যা ফল প্রকাশ হয়েছে) যা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে মোটেই সেই পথে পদ্ম পাপড়ি বিছোনো নেই, বরং আগামী লোকসভা নির্বাচনের জন্য কাঁটা হয়ে থাকতে বিজেপির কাছে। উত্তরবঙ্গের সার্বিক রেজাল্ট বিজেপিকে চিন্তায় রাখছে বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের।
এখনও পর্যন্ত গণনা সম্পূর্ণ হয়নি। তবে যা প্রবণতা, তাতে আলিপুরদুয়ারে মোট ১২৫২টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে বিজেপি ৩১০টি নিজেদের দখলে রাখতে পেরেছে। যেখানে তৃণমূলের দখলে ৬৪৩। আর পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে। ‘১৮ সালে ৫৯টি পঞ্চায়েত সমিতি জিতেছিল, এবারে মোট ১৮৯ টি-র মধ্যে বিজেপি দখলে মাত্র ১৫। বাকি ৫৬টি তৃণমূলের দখলে।
জলপাইগুড়ির ক্ষেত্রে ২০১৮ সালে ২৩৮ টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে ৩৮ টি পঞ্চায়েত সমিতি দখল করেছিল বিজেপি। এবারে মাত্র ১১। তৃণমূলের দখলে ৭৯। জলপাইগুড়িতে গ্রাম পঞ্চায়েত দখলের ক্ষেত্রে কিছুটা এগিয়ে বিজেপি। ১৭০১টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে আগের বার ৩০১টি দখলে রাখলেও, এবার ৩৫৫ দখলে রয়েছে। তৃণমূল অবশ্য এক্ষেত্রেও এগিয়ে। তৃণমূলের দখলে ৭৩০। দার্জিলিঙ, কালিম্পঙে প্রথমবার ভোট হয়েছে। সেক্ষেত্রে বেশ কিছুটা ভালই ফল করেছে বিজেপি। দার্জিলিঙে ৫৯৮টির মধ্যে বিজেপি ৬০টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিজেদের দখলে রেখেছে। কালিম্পঙে পঞ্চায়েত সমিতি ৭টি দখলে রেখেছে বিজেপি। গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রে ২৯টি।
কোচবিহারের রাজবংশী ভোট অবশ্য এক্ষেত্রে ফ্যাক্টর হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কোচবিহারে রাজবংশী ভোট অর্ধেরই বেশি পড়েছের বিজেপির ভান্ডারে। তাই এখানেই একমাত্র বিজেপির ভরা ভান্ডার। মোট ২৫০৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৫৬১ টি এবার দখলে রেখেছে বিজেপি। আগেরবার যেখানে পেয়েছিল ১১৫টি। তৃণমূল অবশ্য এক্ষেত্রেও ১৫১৫ টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিজেদের দখলে রেখেছে।
বাকি মালদহে মোট ৪৩৬ পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে বিজেপির দখলে ১৭। তৃণমূল ৮৬। ৩১৮৬ গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে বিজেপি এবার পেয়েছে ৪৮৩টি আর তৃণমূলের দখলে ১২৩২। উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুরে নিজেদের সঙ্গে নিজেদের গড় রক্ষার লড়াইয়ে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে গেরুয়া শিবির। শাসক শিবিরের সঙ্গে লড়াই তো দূরস্ত। গেরুয়া শিবির নিজেরা যে মাটি শক্ত করেছিল উত্তরবঙ্গে, তা হালকা হয়েছে। অন্তত খুব বেশি হেরফের না হলে বলা ভালো কোনও মিরাকেল না ঘটলে অন্ততপক্ষে গেরুয়া শিবির নিজের রেকর্ড ভাঙতে পারেনি।
সুকান্তর গড় বালুরঘাটেও একেবারেও মুখ থুবড়ে পড়েছে বিজেপি।গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপি ১৮৯-র মধ্যে ৪২টি পঞ্চায়েত সমিতি নিজেদের দখলে রেখেছিল, এবার মাত্র ২৪। গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনের ক্ষেত্রে মোট ১৩০৮ টি-র মধ্যে ২৩৬টি আগের বার জিতলেও এবার বিজেপির ঝুলিতে ৩৩৫। যেখানে তৃণমূলের ৮৭১।
গত দু’বারের নির্বাচনের পর শাসকশিবিরের মনে খেদ ছিল, উত্তরবঙ্গের মানুষ তাঁদের ঝুলি ভরাচ্ছেন না। তাই এবারে তাঁদের মন জয়ে উঠেপড়ে লেগেছিলেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। নবজোয়ার কর্মসূচি অভিষেক শুরু করেছিলেন উত্তরবঙ্গ থেকেই। আবার সেই পর্ব শেষ হতে পঞ্চায়েতের প্রচারও সেখান থেকে। এমনকি গিয়েছেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলতেন, উত্তরবঙ্গেই আসলে বিজেপির দুর্জয় ঘাঁটি। ধীরে ধীরে যেখান যে শক্তি বাড়াতে শুরু করেছিল বিজেপি, তা এখন রীতিমতো মুখ থুবড়ে পড়েছে। এর কারণ আবশ্যিকভাবে বিশ্লেষণ করবেন গেরুয়া শিবিরের শীর্ষ নেতৃত্ব। তবে রাজনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা, যেভাবে নির্বাচনের আগে শাসকদলের সুপ্রিমো ও সেকেন্ড ইন কম্যান্ড মাটি আঁকরে পড়েছিলেন, বিজেপির সে অর্থে কোনও হেভিওয়েট নেতা সেই জনসংযোগে মন দেননি। তাই খামতি হয়তো থেকেই গিয়েছিল। পাশাপাশি অভিষেকের বলা একটাই কথা,,”আপনি বিজেপিকে ভোট দিয়ে আদতে কী পয়েছেন? লক্ষ্মীর ভান্ডার, স্বাস্থ্য সাথী তো আমরাই দিচ্ছি।” এ শব্দবন্ধ হয়তো দাগ কেটে গিয়েছে। তাই আবারও ভান্ডার ভর্তি ঘাসফুল শিবিরেরই।